ডিজিটাল পর্দার ক্ষতিকারক নীল আলো তথা ব্লু লাইট থেকে চোখকে সুরক্ষা দিতে তৈরি হয়েছে ব্লু-লাইট-ফিল্টারিং গ্লাস। ডিজিটাল যুগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ল্যাপটপ বা ফোনের পর্দায় চোখ রাখার ফলে চোখ ঝাপসা হয়ে যাওয়ার অনুভূতি থেকে রেহাই দিতে এই ধরণের চশমা ব্যবহার করা হয়। তবে সত্যিই কি ব্লু লাইট থেকে আপনার চোখের সুরক্ষা দিতে পারে এই চশমাগুলো? সাম্প্রতিক গবেষণার ভিত্তিতে গবেষকরা, এই ধরণের কাচের পিছনে অহেতুক টাকা খরচ করবেন কিনা, সে বিষয়ে দ্বিতীয়বার ভাবার কথা বলছেন। সম্প্রতি, ১৭টি গবেষণা নিয়ে করা নতুন একটি পর্যালোচনাও বলছে, এসব চশমা চোখের ওপর চাপ কমাতে খুব সম্ভবত তেমন কোনও ভূমিকা রাখে না।
২০০০ সালের গোড়ার দিকে থেকে, চক্ষু বিশেষজ্ঞরা ব্লু-লাইট-ফিল্টারিং গ্লাস ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তবে সম্প্রতি, মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন এবং মোনাশ ইউনিভার্সিটির সাথে যৌথ সমীক্ষা প্রকাশ করে। সমীক্ষার মূল বিষয় ছিল চোখের কর্মক্ষমতার উন্নতিতে, রেটিনা রক্ষা এবং ঘুমের মান উন্নত করার ক্ষেত্রে ব্লু-লাইট-ফিল্টারিং লেন্সের সুবিধাগুলিকে সাধারণ লেন্সের সাথে তুলনা করা। তবে সমীক্ষায় দুই লেন্সের মধ্যে তেমন কার্যকরী পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়নি।
দ্য স্টেট ইউনিভার্সিটি অভ নিউ ইউর্ক কলেজের অপটোমেট্রি বিভাগের অধ্যাপক মার্ক রোজেনফিল্ড বলেন, দীর্ঘ সময় ধরেই নীল আলো প্রতিরোধী চশমার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন বিজ্ঞানীরা। অতীতের অনেক গবেষণার পরিসর ছোট হলেও সেগুলোর অনেকগুলোতে দেখা গেছে, এ ধরনের চশমা ব্যক্তির চোখের অস্বস্তি কমায় না, দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেও তেমন কোন ভূমিকা রাখেনা।
ব্লু-লাইট-ফিল্টারিং চশমার সঙ্গে ভাল ঘুমের সংযোগ নিয়ে লরা ডাউনি ও তার দলের নতুন পর্যালোচনায় মিশ্র ফলাফল পাওয়া গিয়েছে। অধ্যাপক ডাউনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে, চক্ষু চিকিৎসায় ব্লু-লাইট-ফিল্টারিং চশমার যোগ্যতা কতখানি, তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক হয়েছে। ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার সম্পর্কিত চোখের চাপ কমাতে, ভালো ঘুম ও রেটিনার সুরক্ষার জন্য এই লেন্সের ব্যবহারের পরামর্শ দিতেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সমীক্ষার ভিত্তিতে তিনি জানান, ব্লু-লাইট-ফিল্টারিং সম্পর্কিত দাবিগুলি অনিশ্চিত। বিভিন্ন সমীক্ষার ভিত্তিতে ব্লু-লাইট-ফিল্টারিং লেন্সের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের মতে, কর্মক্ষমতার দিক থেকে ব্লু-লাইট-ফিল্টারিং লেন্সে ও সাধারণ লেন্সের মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই। তবে আপনি কি পরের বার ব্লু-লাইট-ফিল্টারিং লেন্সের পিছনে অতিরিক্ত টাকা খরচ করবেন?