রণবীর ভট্টাচার্য
আজ খুব পুণ্যের দিন। একদিকে অক্ষয় তৃতীয়া আর অন্যদিকে ভগবান বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরামের জন্মদিন। হিন্দু পৌরাণিক তথ্য অনুসারে যে আট জন পুরুষ অমরত্ব লাভ করেছেন, তার মধ্যে তিনি একজন। তাই পরশুরামের কোনও পুজো করা হয় না, কারণ অনেকে বিশ্বাস করেন যে তিনি এখনও মানুষের মধ্যেই বেঁচে রয়েছেন।
তবে অন্যান্য অবতারের চেয়ে তিনি অনেকটাই আলাদা— ধর্মহীন, পাপিষ্ঠ রাজা, যারা অন্যের সম্পদ লুঠ করেছিল এবং রাজধর্ম পালন করেনি, তাদের বিনাশ করাই ছিল ভগবান পরশুরামের আসল উদ্দেশ্য।
এবার জেনে নেওয়া যাক ভগবান পরশুরাম নিয়ে বেশ কিছু জানা-অজানা তথ্য:
- পরশুরাম শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল কুঠার হস্তে রাম।
- পরশুরামের পিতা জমদগ্নি ব্রাহ্মণ ছিলেন এবং মা রেনুকা ছিলেন ক্ষত্রিয়। পিতামাতার চতুর্থ সন্তান ছিলেন পরশুরাম। জন্মসূত্রে ব্রাহ্মণ হলেও ক্ষাত্রতেজসম্পন্ন ছিলেন পরশুরাম।
- মা রেণুকা ছিলেন অযোধ্যার সূর্যবংশের সন্তান। সেই বংশেই রামচন্দ্রের জন্ম হয়।
- কঠোর তপস্যা করে পরশুরাম শিবের কাছ থেকে পরশু লাভ করেন এবং যুদ্ধবিদ্যা শেখেন।
- পরশুরাম সমুদ্রের আগ্রাসন থেকে মালাবার ও কোঙ্কন উপকূলকে রক্ষা করেছিলেন।
- পরশুরাম ক্ষত্রিয়দের ২১ বার ধ্বংস করে ছিলেন।
- কর্ণ মিথ্যা বলে পরশুরামের কাছে শিক্ষা লাভ করেছেন। পরশুরাম তাঁকে অভিশাপ দেন যে যুদ্ধের সময়ে জ্ঞান ভুলে যাবেন এবং অস্ত্র চালাতে পারবেন না। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে এই অভিশাপ কর্ণের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
- ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পরশুরামকে তার সুদর্শন চক্র অর্পণ করেছিলেন। যা পরবর্তীকালে পরশুরাম শ্রীকৃষ্ণকে ফিরিয়ে দেন।
- পরশুরাম রামের লীলা ও মহাভারতের যুদ্ধ, উভয়ই দেখেছিলেন— অর্থাৎ ত্রেতা ও দ্বাপর যুগে তিনি বর্তমান ছিলেন।
- একবার কৈলাশে গিয়ে শিবের সঙ্গে দেখা করতে গেলে গণেশ পরশুরামকে বাধা দেন। পরশুরাম ক্ষিপ্ত হয়ে গণেশের একটি দাঁত ভেঙে দেন আর সেই থেকে গণেশ একদন্ত নামে পরিচিত হন।
এর পাশাপাশি পুরাণ বলছে, পরশুরাম নিজের মায়ের মুণ্ডচ্ছেদ করেন। সেই গল্প জেনে নেওয়া যাক।
একদিন তাঁর মা রেনুকা জল আনতে গঙ্গাতীরে যান। সেখানে তিনি গন্ধর্বরাজকে স্ত্রীর সঙ্গে জলবিহার করতে দেখে বিভোর হয়ে যান। জমদগ্নির যজ্ঞের সময় যে চলে যাচ্ছে, তাও ভুলে তিনি৷ যখ ফেরেন, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। ঋষি বিষয়টি জেনে প্রচণ্ড রেগে যান।
তিনি একে একে চার ছেলেকে বলেন, মায়ের মুণ্ডচ্ছেদ করতে। কনিষ্ঠ পুত্র পরশুরামই সেই কাজটি করেন। তখন জমদগ্নি বাকি তিন ভাইকেও হত্যার নির্দেশ দেন। পরশুরাম তাঁদেরও হত্যা করেন।
প্রসন্ন জমদগ্নি তাঁকে বর প্রার্থনা করতে বলেন। পরশুরাম মা ও ভাইদের প্রাণ ফিরিয়ে দেওযার আবেদন করেন। জমদগ্নি সেই কথা রাখেন।
কিন্তু মাতৃহত্যার পাপে কুঠারটি পরশুরামের হাতে আটকে যায়। জমদগ্নি তাঁকে বলেন, কোনও তীর্থস্থানের জলের স্পর্শেই এই পাপ মুছতে পারে। নানা তীর্থে ঘুরতে ঘুরতে এক সময় ব্রহ্মকুণ্ডে উপস্থিত হন পরশুরাম। সেখানকার জলের স্পর্শে তাঁর হাত থেকে কুঠার পড়ে যায়।