টানা হাফ ডজন ম্যাচে হারের পর অবশেষে জয়ের মুখ দেখল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। তারা বৃহস্পতিবার সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ঘরের মাঠেই তাদের ৩৫ রানে হারিয়ে দেয়। এই জয়ের ফলে ৯ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট সংগ্রহ করল আরসিবি। এতে তাদের আইপিএলে প্লে-অফে ওঠার রাস্তাটা যে সহজ হল, এমনটা নয়। ওই একটা ক্ষীণ আশা বেঁচে থাকল। এই ম্য়াচ হারলে সেই আশাটুকুও আর থাকত না। তবে আরসিবি এদিনের ম্যাচ জিতে যেটা করল, সেটা পয়েন্ট টেবলের প্রথম সারির দলগুলোর মধ্যে ইঁদুর দৌড়ের লড়াইটা আরও জমিয়ে দিল।
এদিন ম্যাচের প্রথম ইনিংসে নিজামের শহরে ঝড় তোলেন রজত পাতিদার। সেই সঙ্গে কোহলির হাফসেঞ্চুরি এবং গ্রিনের লড়াকু ইনিংসের হাত ধরে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ২০০ পার করে যায়। আর ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসের আরসিবি-র বোলারদের দাপটে ২০৭ রান তাড়া করতে নেমে ঘরের মাঠে একেবারে কচুকাটা হয় সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ব্যাটাররা। তাদের ইনিংস শেষ হয় ৮ উইকেটে ১৭১ রানে।
আরও পড়ুন: ১৯ বলে ঝোড়ো হাফসেঞ্চুরি, উথাপ্পার নজির ছুঁলেন পাতিদার, অল্পের জন্য মিস গেইলের রেকর্ড
বৃহস্পতিবার টস জিতে হায়দরাবাদের ব্যাটিং লাইন আপের কথা মাথায় রেখেই প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন আরসিবি-র অধিনায়ক ফ্যাফ ডু'প্লেসি। ব্যাট করতে নেমে শুরুটা মন্দ করেননি দুই ওপেনার ফ্যাফ এবং বিরাট কোহলি। কিন্তু ১২ বলে ২৫ করে টি নটরাজনের বলে সাজঘরে ফেরেন আরসিবি অধিনায়ক। সেটা প্রথম ধাক্কা ছিল। আরসিবি-র ইনিংসের সময়ে মজার বিষয় যেটা ঘটে, তা হল, প্রথম পাঁচ ওভারে পাঁচ জন বোলারকে দিয়ে বল করান হায়দরাবাদের অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। এ বিকল্পের ফলে রান তুলতে কিছুটা তো সমস্যায় পড়েছে বেঙ্গালুরু।
আরও পড়ুন: IPL-এ ২৫০ ম্যাচ খেলার মাইলস্টোন স্পর্শ করল বেঙ্গালুরু, ছুঁল মুম্বইয়ের অনন্য নজির
যাইহোক তিনে ব্যাট করতে নেমে চূড়ান্ত হতাশ করেন উইল জ্যাকস। ৯ বলে ৬ করে মায়াঙ্ক মার্কন্ডের বলে তিনি বোল্ড হন। পাওয়ার প্লে-র পরে রানের যে গতিটা কমে গিয়েছিল, চারে ব্যাট করতে এসে একেবারে ঝড় তুলে রজত পাতিদার স্কোরবোর্ডের রানের গতি দ্বিগুণ করে দেন। কোহলির সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে জুটিতে ৩৪ বলে ৬৫ রান তোলে আরসিবি। এর মধ্যে ২০ বলে ৫০ রান একাই করেছেন পাতিদার। প্রসঙ্গত, এদিন ১৯ বলে নিজের হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন রজত পাতিদার। তাঁর ইনিংস সাজানো ছিল পাঁচটি ছক্কা এবং দু'টি চারে। তাঁকে ফেরান আইপিএলে নিজের ১০০তম ম্যাচ খেলতে নামা জয়দেব উনাদকাট।
পাতিদার আউট হওয়ার পর কোহলিও নিজের অর্ধশতরান পূর্ণ করেন। কিন্তু এদিন অত্যন্ত মন্থর ইনিংস খেলেন কোহলি। ৩৭ বলে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি। তবে ৪৩ বলে ৫১ করে উনাদকাটের বলেই আউট হন বিরাট। মহিপাল লোমরোরকেও (৪ বলে ৭ রান) ফেরান হায়দরাবাদের বাঁ হাতি পেসার। তবে ক্যামেরন গ্রিন শেষ পর্যন্ত ক্রিজে থেকে লড়াই করে যান। তিনিই দায়িত্ব নিয়ে বেঙ্গালুরুর ইনিংস দু'শো পার করিয়ে দেন। ২০ বলে ৩৭ করে গ্রিন অপরাজিত থাকেন। ৬ বলে ১১ করেন দীনেশ কার্তিক। ৬ বলে ১৩ করেন স্বপনিল সিং। নির্দিষ্ট ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২০৬ রান করে আরসিবি। হায়দরাবাদের উনাদকাট ৩ উইকেট নেন। এছাড়া ২ উইকেট নেন টি নটরাজন। ১টি করে উইকেট নেন প্যাট কামিন্স এবং মায়াঙ্ক মার্কন্ডে।
আরও পড়ুন: ফের চারশো পার কোহলির, রায়না-ওয়ার্নারকে পিছনে ফেলে গড়ে ফেললেন নজির
রান তাড়া করতে নেমে এদিন শুরু থেকেই নড়বড় করছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। ইনিংসের শুরুতেই ট্র্যাভিস হেডকে ফিরিয়ে আরসিবি-র হয়ে আসল কাজটি করে ফেলেন উইল জ্যাকস। দলের ৩ রানের মাথায় ১ করে সাজঘরে ফেরেন হেড। হেডই অন্যদিন ওপেন করতে নেমে ঝড় তুলে হায়দারাবাদের ইনিংসের ভিত গড়ে দেন। প্রথম ওভারে হেডের আউট হওয়াটা বিশাল ধাক্কা হয় হায়দরাবাদের জন্য। এর পর ১৩ বলে ৩১ করে ফেরেন অভিষেক শর্মাও। তাঁকে ফেরান যশ দয়াল। একই ওভারে এডেন মার্করাম (৮ বলে ৭), হেনরিখ ক্লাসেনকে (৩ বলে ৭) ফেরান স্বপনিল সিং। দুই তারকাই এদিন নিরাশ করেন। নীতি কুমার রেড্ডিকে (১৩ বলে ১৩) বোল্ড করেন করণ শর্মা। ৬৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় হায়দরাবাদ। কারণ তাদের কোমরই ভেঙে যায়।
এর পর ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য লড়াই চালান শাহবাজ আহমেদ। কিন্তু তাঁকে সঙ্গত করার মতো কেউ ক্রিজে টিকতে পারেননি। আব্দুল সামাদ ১০ করে আউট হন। আটে নেমে দলের অধিনায়ক প্যাট কামিন্স তাও ১৫ বলে ৩১ রান করেছিলেন। কিন্তু তিনিও ক্রিজে টিকতে পারেননি। ১৩ বলে ১৩ করে আউট হন ভুবনেশ্বর কুমারও। ৩৭ বলে ৪০ করে অপরাজিত থাকেন শাহবাজ আহমেদ। ১০ বলে অপরাজিত ৮ রান করেন জয়দেব উনাদকাট। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। ৮ উইকেটে ১৭১ রানেই থামে হায়দরাবাদের ইনিংস। আরসিবি-র হয়ে দু'টি করে উইকেট নিয়েছেন স্বপনিল, করণ এবং গ্রিন। ১টি করে উইকেট নিয়েছেন উইল জ্যাকল এবং যশ দয়াল।