আজ শ্রাবণ মাসের শেষ দিন, আজ বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে মনসা পুজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কেন মা মনসা কে দীর্ঘদিন ধরে বাঙালি সমাজে দেবী হিসেবে পুজো করা হয় তার পিছনে রয়েছে নানান পৌরাণিক কাহিনি।
মা মনসার দুই রকম রূপ একটা হল লৌকিক রূপ অন্যটি হলো পৌরাণিক রূপ। কাব্য অনুসারে মনসাকে শিবের কন্যা হিসেবে পুজো করা হয়। কিন্তু অভিজাত হিন্দু সমাজে তখনও তার পুজোর প্রচলন ছিল না, মূলত জেলে কৃষক সম্প্রদায়ের মানুষই তার পুজো করতো।
মা মনসার জন্ম বৃত্তান্ত নিয়ে অনেক পৌরাণিক কাহিনি আছে। কারও কারও মতে তিনি পদ্ম বনে জন্মগ্রহণ করেছেন, কেউ কেউ বলেন তিনি কেয়াবনে জন্ম নিয়েছেন, তাই তার নাম হলো কেতুকা। আবার অনেকে বলে যে তিনি অযোনিসম্ভবা। পাতালে তার জন্ম, তাই পাতাল কুমারী রূপে তিনি পরিচিত।
মা মনসার সঙ্গী চাঁদ সওদাগরের দ্বন্দ্ব সর্বজনবিদিত। এই নিয়ে রচিত হয়েছে মনসামঙ্গল কাব্যগ্রন্থ। সেখানে দেখানো হয়েছে নিজের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য মা মনসার লড়াই। চাঁদ সওদাগর ছিলেন শিবের ভক্ত। তিনি কিছুতেই রাজি ছিলেন না মা মনসার পুজো করতে। কিন্তু নিজের মর্যাদা মর্ত লোকে প্রতিষ্ঠা করতে গেলে চাঁদ সওদাগরের হাত থেকেই পুজো নিতে হবে মা মনসাকে। সেই নিয়েই এগিয়ে গেছে কাহিনি। কাহিনি শেষে পরিলক্ষিত হয় যে চাঁদ সওদাগর বাধ্য হন মা মনসার পুজো করতে।
শ্রাবণ মাস মূলত বর্ষাকাল। এই সময় খুব সাপের প্রাদুর্ভাব বাড়ে। গ্রাম বাংলার বেশিরভাগ মানুষই কৃষিজীবী। মাঠে-ঘাটে কাজ করতে গিয়ে অনেক সময়ই তারা সাপের কামড়ের শিকার হয়। মনসা কি সাপের দেবী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তাই স্বরপের ছোবল থেকে বাঁচতে সর্পের দেবী মনসা কে পুজো করার রীতি প্রচলিত হয়েছে বাংলার ঘরে ঘরে। অনেকে সন্তান লাভের উদ্দেশ্যও মা মনসার পুজো করে থাকেন। তাই শ্রাবণ সংক্রান্তির দিনে ঘট পেতে বাংলার ঘরে ঘরে পূজিত হন মা মনসা।