চৈত্র মাসের শেষ দিন চলে এই চড়ক উৎসব। চৈত্র সংক্রান্তির দিনে পালিত হয় চড়ক পুজো। বিভিন্ন স্থানে এই দিনকে মেলা বসে এবং কয়েকদিন ধরে চলতে থাকে এই মেলা। শিবের গাজন এই মেলার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে চৈত্র মাসে শিবের আরাধনা এবং নাচ গানের উল্লেখ রয়েছে। বলা হয়ে থাকে দ্বারকার রাজা কৃষ্ণের সঙ্গে শিবের একনিষ্ঠ উপাসক বান রাজার যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধে নাকি মহাদেবের থেকে অমরত্ব লাভ করার জন্য বান রাজা নিজের শরীরের রক্ত দিয়ে মহাদেবকে তুষ্ট করেন। তখন থেকেই শুরু হয় এই চড়ক পুজো। ১৪৮৫ সালে রাজা সুন্দরানন্দ ঠাকুর প্রথম এই পুজোর প্রচলন করে বলে মনে করেন অনেকে। সেই থেকেই এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে।
এই পুজোয় বেশ কিছু প্রথা রয়েছে যা, নিষ্ঠার সঙ্গে এখনও পালন করা হয়। যেমন কাঁটার উপর লাফানো, শিব ঠাকুরের বিয়ে, আগুনের উপর নাচ, শরীর বান বিদ্ধ করে চরক গাছে দোলা, জ্বলন্ত কয়লার উপর দিয়ে হাঁটা, ছুরি বা ধারালো কিছুর উপর লাফানো। এই পুজোর সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল দৈহিক যন্ত্রণা। যা এই পুজোর অন্যতম বিশেষ অঙ্গ বলে পরিচিত।
অনেকে বলেন যে প্রাচীন কৌম সমাজে প্রচলিত নরবলির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এই পুজোর রীতিনীতি। সর্বোপরি এই পুজোর মূলে রয়েছে ভূত প্রেত, পুনর্জন্মের গাঁথা। এই পুজোয় ভক্ত সন্ন্যাসী সাধুসন্তরা হুড়কো দিয়ে নিজেদের চাকার সঙ্গে বেঁধে দ্রুত বেগে ঘুরতে থাকেন। লোহার শলাকা তাদের পায়ে পিঠে প্রবেশ করানো হয়। তবে ব্রিটিশ সরকার আইন প্রণয়ন করে এই নিয়ম-নীতি বন্ধ করে দিলেও আজও বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামেগঞ্জে এই নিয়ম নীতি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে আজও পালিত হয়ে আসছে।