আর পাঁচ মাস বাকি। তারপর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে তৃণমূলের বিপক্ষে সুর চড়াচ্ছেন দলের নেতারাই। এতদিন মিহির গোস্বামী বেসুরো গেয়ে দলবদল করলেন। শুভেন্দু অধিকারী এখনও দলে রয়েছেন ঠিকই, তবে মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে এসেছেন। এই পরিস্থিতিতে তাঁকে পূর্ণ সমর্থন করলেন তৃণমূলের ‘বিদ্রোহী’ বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত। ইদানিংকালে যাঁকে নিয়ে দলের অন্দরে অস্বস্তি কম নয়। শুভেন্দু অধিকারী মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসতেই মুখ খুললেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘আমি শুভেন্দুর ফ্যান। ও যা করেছে একেবারে ঠিক করেছে।’ আর এই মন্তব্যের পর থেকে দলের অন্দরে আলোচনা শুরু হয়েছে, এই 'উইকেট'-ও পড়বে নাকি!
শুক্রবার দুপুরে রাজ্যের সেচ, জলসম্পদ ও পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী তাঁর ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে। পাশাপাশি তাঁকে এই দফতরগুলিতে কাজের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন শুভেন্দু। বিকেলের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ইস্তফাপত্র গ্রহণও করেছেন। এমনকী এই পদত্যাগপত্র রাজ্যপালের কাছেও পাঠিয়ে ছিলেন শুভেন্দু। তারপর বিকেলেই হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যানের পদও ছেড়ে দেন। তার আগে নিজের নিরাপত্তাও ছেড়ে দিয়েছিলেন। এইচআরবিসির চেয়ারম্যান পদ আগেই ছেড়ে দিয়েছিলেন। আসলে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় যেদিন বলেছিলেন, ‘চারটে পদ নিয়ে বসে আছিস। হিম্মত থাকলে তা ছেড়ে দিয়ে দেখা। চারটে চেয়ারে বসছিস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে এসব কে দিত?’ তার জবাবই শুভেন্দু এভাবে দিলেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
তবে এদিন শীলভদ্র বলেন, ‘তিন–চারটি জেলার ভালো সংগঠক ছিলেন শুভেন্দু। দক্ষ মন্ত্রী ছিলেন। শুভেন্দু মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়া রাজ্যের মানুষের স্বার্থে ক্ষতি হল। মুখ্যমন্ত্রীই ঠিক করেন, মন্ত্রী কে হবেন, আর কে থাকবেন। তবে নিশ্চয়ই মুখ্যমন্ত্রী ভালো কাউকে পেয়ে গিয়েছেন।’ রাজনৈতিক মহলের মতে, আসলে এখানে শুভেন্দু এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন। এক দলকে ও নেতাদের উচিত শিক্ষা দিলেন। আবার নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ পালাবদলের রাস্তা পরিষ্কার রাখলেন।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের শুরুতেই প্রশান্ত কিশোরকে নিশানা করে শীলভদ্র বলেন, ‘একটা বাজারি কোম্পানি এখানে টাকা নিয়ে ভোট করাতে এসেছে। তারা বলছে ভোট করাবে। আমাকে রাজনীতির জ্ঞান দিচ্ছে। এই পরিবেশে আর মানিয়ে নিতে পারছি না।’ তারপরেই শুভেন্দুকে সমর্থন করায় তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়িয়েছেন তিনি বলে মনে করা হচ্ছে।
মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ বলেই রাজনৈতিক মহলে পরিচিত শীলভদ্র দত্ত। ২০১৭ সালে মুকুল রায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সময় হাওয়া উঠেছিল শীলভদ্রও জোড়াফুল ছাড়বেন। তবে এখনও তৃণমূলেই আছেন তিনি। তবে আগেই জানিয়েছেন, নির্বাচনে আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। কিন্তু এবার কি সামনের বিধানসভা ভোটকে পাখির চোখ করে বিজেপিতে যাবেন শীলভদ্র? রাজ্য–রাজনীতিতে এখন এই প্রশ্নই উঠতে শুরু করেছে।