দার্জিলিং জেলা হাসপাতালে একই দিনে দুই রোগীর মৃত্যুকে ঘিরে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় বিক্ষোভ প্রতিবাদ করেন রোগী-পরিজনরা। শেষ পর্যন্ত চাপের মুখে পড়ে হাসপাতালের দুজন চিকিৎসককে গাফিলতির দায়ে সাসপেন্ড করল জেলা স্বাস্থ্য দফতর। একইসঙ্গে দার্জিলিং জেলা হাসপাতালের সুপারকেও বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার ওই হাসপাতালে এক প্রসূতির মৃত্যু হওয়ার পাশাপাশি অন্য এক গর্ভবতী মহিলার গর্ভস্থ সন্তান নষ্ট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাকে ঘিরেই বিক্ষোভ দেখান রোগী পরিবারের সদস্যরা।
আরও পড়ুন: NRS–এ মরণাপন্ন যুবককে ২৪ ঘণ্টা ফেলে রাখা হল ট্রলিতে, বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন দার্জিলিং জেলা হাসপাতালে সন্তান প্রসবের জন্য ভর্তি হয়েছিলেন দার্জিলিংয়ের রেলিং কাইজার এলাকার এক প্রসূতি। ১৬ নভেম্বর প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু, ভর্তি করার পর তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তাঁর সিজার করানোর জন্য অনুরোধ করেন পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু, চিকিৎসক জানিয়ে দেন, সিজারের প্রয়োজন নেই। স্বাভাবিক নিয়মেই প্রসব সম্ভব। কিন্তু, সোমবার রাতে প্রচন্ড রক্তপাত হওয়ায় তাঁর সিজার করানো হয়। মঙ্গলবার আবার অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয় প্রসূতিকে। তারপরেই তাঁর মৃত্যু হয়। রোগী পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসক অনিয়মিত আসেন। চিকিৎসার গাফিলতির জন্য এরকম ঘটেছে।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার রাতেই এক অন্তঃসত্তা মহিলা প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতাকলে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু, সঠিক সময় প্রসব না হওয়ার জন্য গর্ভস্থ সন্তান নষ্ট হয়ে যায় ওই অন্তঃসত্ত্বা মহিলার। এই দুটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোগী পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখান। পরে হাসপাতালে পৌঁছন জিটিএ’র ভাইস চেয়ারম্যান রাজেশ চৌহান। এছাড়াও ছিলেন দার্জিলিং পুরসভার চেয়ারম্যান দীপেন ঠাকুরি এবং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তুলসি প্রামাণিক। রোগীর পরিবার মৃতদেহ নিতে অস্বীকার করে। তাদের দাবি, যতক্ষণ না চিকিৎসকদের শাস্তি দেওয়া হবে তারা দেহ নেবে না। এই ঘটনার পরেই দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিসে জরির বৈঠক বসে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জিটিএ’র সদস্যরা, হাসপাতাল এবং রোগী পরিবারের সদস্যরা প্রায় কয়েক ঘণ্টা ধরে বৈঠক চলে। সেখানে দুজন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া হাসপাতালের সুপারকে বদলি করা হয়। তাছাড়া ঘটনার তদন্তের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটিও গঠন হয়েছে। অবশেষে ৩১ ঘণ্টা পর রোগী পরিবার দেহ নিয়ে যায়।
জিটিএ’র তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছে, চিকিৎসায় গাফিলতির কারণে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তাদের অভিযোগ, বর্তমানে রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। কমিটি রিপোর্ট দেখার পরে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে। এছাড়াও, প্রসূতিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জিটিএ’র তরফে জানানো হয়েছে।