মহারাষ্ট্রের থানে জেলার শাহানপুরে ভয়াবহ ক্রেন দুর্ঘটনা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ২০ জন শ্রমিকের। তার মধ্যে রয়েছেন পশ্চিমবাংলার জলপাইগুড়ি জেলার ৪ জন শ্রমিক। এর মধ্যে দু'জন ধুপগুড়ি ব্লকের এবং দু'জন ময়নাগুড়ি ব্লকের বাসিন্দা। তাঁদের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরেই শোকের ছায়া নেমেছে পরিবারে। মঙ্গলবার রাতে মৃত ৪ শ্রমিকের কফিন বন্দি মৃতদেহ মহারাষ্ট্র থেকে জলপাইগুড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। মৃতদের নাম হল ধুপগুড়ির পশ্চিম ডাউকিমারির বাসিন্দা গণেশ রায় (৩৮), উত্তর কাঠুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা প্রদীপ রায় (৩৬), ময়নাগুড়ির চারেরবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত সরকার (২৪) এবং বলরাম সরকার (২৮)। মৃতেরা মহারাষ্ট্রে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন।
আরও পড়ুন: এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজের সময় ক্রেন ভেঙে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, মৃত ১৮ শ্রমিক
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ি জেলার ১০ জন যুবক সেখানে কাজ করছিলেন। এরপর সোমবার গভীর রাতে দুর্ঘটনার খবর পান যুবকদের পরিবারের সদস্যরা। তারপর থেকে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন তাঁরা। কার্যত বিনিদ্র রাত কাটে পরিবারের সদস্যদের। যুবকদের সঙ্গে বহুবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন তাঁরা। কিন্তু ব্যর্থ হন। শেষে সকাল হতেই তাঁরা থানায় যান। কিন্তু পুলিশের কাছে তখন কোনও খবর ছিল না। পরে স্থানীয় প্রশাসনের তরফে তাঁদের মৃত্যুর খবর জানানো হয়। এ বিষয়ে জলপাইগুড়ির জেলা শাসক মৌমিতা গোদারা বলেন, ‘মহারাষ্ট্রের থানে জেলার শাহানপুরে ক্রেন দুর্ঘটনায় ওই ৪ যুবকের মৃত্যু হয়েছে।’ প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, যে ১০ যুবক ওই নির্মাণ সংস্থায় কাজ করছেন তাঁরা ধুপগুড়ি এবং ময়নাগুড়ি ব্লকের বাসিন্দা। সেখানে তাঁরা এক্সপ্রেসওয়েরর নির্মীয়মাণ সেতুর কাজ করছিলেন। সেই সময় বিশাল আকার ক্রেন তাঁদের ওপর ভেঙে পড়ে। এই ঘটনায় মোট ২০ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। তার মধ্যে জলপাইগুড়ি জেলার ৪ যুবক রয়েছেন। বাকি ৬ যুবক সুস্থ রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরের পর তাঁদের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন পরিবারের সদস্যরা। তাঁর মধ্যে গণেশ রায়ের মা মৃত্যুর খবর শোনার পরে বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন। তাঁর স্ত্রী সংজ্ঞা হারিয়েছেন বেশ কয়েকবার।
প্রসঙ্গত, গণেশের পরিবারের রয়েছে মা, স্ত্রী, এক ছেলে এবং দুই মেয়ে। বেশি উপার্জনের আশায় ভিন রাজ্যে কাজের জন্য পাড়ি দিয়েছিলেন গণেশ। তিনিই ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। কিন্তু তাঁর মৃত্যুতে শোকে কাতর পরিবারের সদস্যরা। তাঁর স্ত্রী প্রতিমা রায় বলেন, ‘রাতে তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছিল। ২৮ দিন পর বাড়ি ফেরার কথা ছিল। ছেলেমেয়েরা সেই কথা শুনতেই আনন্দে নেচে উঠেছিল।’ তাঁর পরিবারের আরেক সদস্য জানান, ’ওই ১০ জনের একসঙ্গে বাড়ি আসার কথা ছিল। কিন্তু আর তাঁদের বাড়ি ফেরা হল না। সব ওলট পালট হয়ে গেল।’ সুব্রত এবং বলরামের পরিবারের সদস্যরাও শোকাহত। মাঝখানেকের মধ্যেই তাঁদের বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু আর তাদের বাড়ি ফেরা হল না। এ বিষয়ে ময়নাগুড়ির বিডিও শুভ্র নন্দী জানিয়েছেন, প্রশাসনের তরফে নির্মাণকারী সংস্থা এবং মৃতদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। গতকাল বিকেলে দেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে।