দু’দিন আগেই ঝাড়গ্রামের ছত্রী গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূল কংগ্রেসে মিশে গিয়েছে। এবার আরও বড় ভাঙনের আশঙ্কায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। আর সেটাও ঝাড়গ্রামেই। কারণ এতদিন ধরে শ্যালক–ভগ্নিপতির অম্ল–মধুর সম্পর্কের অবসান হতে চলেছে। আর তাতেই ভাঙনের শঙ্কা ঝাড়গ্রামের গেরুয়া শিবিরে। এই নিয়ে দলের অন্দরে আলোচনাও হতে শুরু করেছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, এই শ্যালক রাজেশ মণ্ডল বিজেপির ঝাড়গ্রামের জেলা সম্পাদক। আর তাঁর ভগ্নিপতি সিন্টু সাহা তৃণমূল কংগ্রেসের হাড়দা অঞ্চল সভাপতি। সুতরাং দু’জন কাছের মানুষের ভিন্ন দল করা নিয়ে অশান্তির আগুন জ্বলছিল সংসারে। শুধু তাই নয়, গত পাঁচ বছরে তাঁদের অশান্তি খবরে উঠে এসেছিল। এমনকী সিন্টুর সাঙ্গপাঙ্গর অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার হয়ে জেল খাটতে হয়েছে রাজেশকে। এবার সেই রাজেশ দলবল নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন বলে সূত্রের খবর। সুতরাং বিজেপিতে ভাঙন অবশ্যম্ভাবী বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
এদিকে রাজেশের স্ত্রী ঝুমা মণ্ডল বিজেপি পরিচালিত হাড়দা পঞ্চায়েতের প্রধান। তাই রাজেশ দলবদল করলে স্ত্রী সমস্যায় পড়ে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে স্ত্রীকে নিয়েই যোগ দিতে হয় ঘাসফুলে। এটা আঁচ করতে পেরেই প্রধান পদ থেকে ঝুমাকে সরাতে অনাস্থার তোড়জোড় শুরু করেছেন বিজেপির নেতারা। তবে বিডিও ছুটিতে থাকায় চিঠি জমা পড়েনি।
এই নিয়ে যখন এলাকায় জোর চর্চা শুরু হয়েছে তখন রাজেশ বলেন, ‘সম্মান নিয়ে রাজনীতিটা করি। সেখানে চিড় ধরলে থাকা সম্ভব নয়। তাই পুরনো দলেই ফিরব সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ আর সিন্টুর বক্তব্য, ‘কিছু মানুষের জন্য আমার আর রাজেশের ব্যক্তিগত সম্পর্ক নষ্ট হয়েছিল। এখন ভুল বোঝাবুঝি মিটেছে। তাই দলবল নিয়ে রাজেশ তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিতে চাইছেন।’
সিন্টুর স্ত্রীর জেঠতুতো দাদা রাজেশ একসময় ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের হাড়দা–১ বুথ সভাপতি। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বিজেপিতে যোগ দেন রাজেশ। জেলা সম্পাদকের পদ পান। ২০১৮ সালের নির্বাচনে হাড়দা গ্রাম পঞ্চায়েত বিরোধীশূন্য করে দখল নেয় বিজেপি। প্রধান হন রাজেশের স্ত্রী ঝুমা। আর রাজেশও বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হন। মোটামুটি সংসার গুছিয়েই ফেলেছিলেন। একুশের নির্বাচনে হাড়দার ২০টি বুথের মধ্যে ১৩টিতে বিজেপি পিছিয়ে থাকায় দলের মুখ–ঝামটার সম্মুখীণ হন রাজেশ। তার পরই এই সিদ্ধান্ত।
সূত্রের খবর, শনিবার বিকেলে রাজেশ ঝাড়গ্রামে বিজেপি কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে বৈঠকে এসেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পরে রাজেশ ঘনিষ্ঠ মহলে বলেন, ‘দলকে শেষ কথা জানাতে গিয়েছিলাম।’ কিন্তু সেখানে ঠিক কি হয়েছে তা বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে এটুকু বোঝা গিয়েছে ঝাড়গ্রামে বড় ভাঙন আটকাতে পারছেন না শুভেন্দু অধিকারী।