অনুব্রত মণ্ডলকে সিবিআই গ্রেফতার করার পর গরু পাচারের সূত্র খুঁজতে শুরু করেছে তদন্তকারীরা। এই তদন্তে নেমে বীরভূমে দু’টি বড় পশু হাটের উপর তাঁদের নজর পড়েছে। অভিযোগ, এই দুই জায়গা থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হতো গরু পাচার। তদন্তে নেমে এই তথ্যই উঠে এসেছে সিবিআইয়ের হাতে। এমনকী কয়েকজন পুলিশও জড়িত ছিলেন এই অপারেশনে। আবার আন্তর্জাতিক গরু পাচারের কিংপিন এনামুল হকের নামে গরু বিক্রির ভুয়ো চালান তৈরি করা হতো। রাজ্যের বিভিন্ন পশুহাট পরিচালন কর্তৃপক্ষকে চাপ দিয়ে এনামুলের নামে গরু বিক্রির ভুয়ো চালান সংগ্রহ করতেন অনুব্রত। আর সেটাই ছিল বিএসএফের হাতে আটক হওয়া গরু পাচারের মোক্ষম হাতিয়ার বলে মনে করছে সিবিআই।
পশু হাট দুটি কোথায়? সিবিআই যে তথ্য পেয়েছে তাতে একটি পশু হাট ইলামবাজার ব্লকের সুখবাজারে। অন্যটি মুরারই ২ ব্লকের হিয়াতনগরে। পাচারকারীরা সাধারণ গরুকে যেমন বাংলাদেশে পাঠাত, তেমনই সীমান্তে বিএসএফের হাতে আটক হওয়া গরুও পাচার করে দিত। এনামুল ও তার লোকজনের সঙ্গে বিএসএফ কর্তাদের দুর্দান্ত বোঝাপড়া ছিল। আটক গরু নিলাম করাই দস্তুর। এনামুল সেই নিলামে অংশ নিয়ে সব গরু কিনে নিত। নিয়ম অনুযায়ী, নিলামে কেনা গরু সে কোথায় বিক্রি করল, তার নথিপত্র থাকা উচিত। সিবিআই গরু পাচার কাণ্ডে জাল গোটাতে শুরু করলে এনামুলও নিরাপত্তার অভাববোধ করতে থাকে। তখনই রাজ্যের পশুহাটগুলি থেকে সে ভুয়ো চালান সংগ্রহ শুরু করে।
আর কী জানা যাচ্ছে? এক গরু ব্যবসায়ীর নাম রয়েছে এই মামলায় সিবিআইয়ের সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে। সেই ব্যক্তি ওখানকার গরু পাচার সিন্ডিকেটের হোতা বলেই জানা যাচ্ছে। সুখবাজারে তাঁর পেল্লায় বাড়িও রয়েছে। ইলামবাজার থেকে বোলপুর যাওয়ার পথে তাঁর একটি বিরাট মার্বেলের শোরুম আছে। বোলপুরে প্রচুর জমির মালিকও তিনি বলে সিবিআই জানতে পেরেছে। আর এই ব্যক্তির সঙ্গেই অনুব্রতের দেহরক্ষী সায়গাল হোসেনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল বলে দাবি করছে সিবিআই। সায়গালের নামও চার্জশিটে রয়েছে। আর ইলামবাজার–সহ বীরভূমের বিভিন্ন হাটে গরু বিক্রি হতো বলে খবর। পরে সেই গরুগুলিকে এনামুলের সিন্ডিকেট বাংলাদেশে পাচার করে দিত।
সিবিআই ঠিক কী তথ্য পেয়েছে? সূত্রের খবর, ওড়িশা, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, বিহার হয়ে গরু বীরভূমে আসত। সেগুলির অধিকাংশই ইলামবাজার পশুহাটে আসত। ইলামবাজারের পশুহাট সপ্তাহে একদিন (শনিবার) খোলা থাকার কথা। কিন্তু, পাচার কারবার শুরু হওয়ায় সেই হাট সপ্তাহের প্রায় সাতদিনই খোলা থাকত বলে বলে জানতে পেরেছে সিবিআই। রাতের অন্ধকারে গরুগুলিকে ট্রাকে করে হিয়াতনগর মোড়, ওমরপুর হয়ে জঙ্গিপুর নিয়ে যাওয়া হতো। সাগরদিঘি দিয়েও পাচার করা হতো। তখন নলহাটি, মোরগ্রাম হয়ে সাগরদিঘি ঢুকত গরু বোঝাই ট্রাক। নির্দিষ্ট রাতে একঘণ্টা বা দু’ঘণ্টা সীমান্তের চোরা পথ কার্যত খুলে দেওয়া হতো। গরু চলে যেত বাংলাদেশে। গোটা অপারেশন অনুব্রত মণ্ডলের অঙ্গুলিহেলনে হতো বলে মনে করছে সিবিআই।