দুর্গাপুজোয় যখন আনন্দে গা ভাসিয়েছেন বাংলার মানুষ, তখন অর্থাভাবে অনাহারে দিন কাটাচ্ছিলেন তিন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। আধপেটা খেয়েই কোনওভাবে দিন কাটাচ্ছিলেন। মহাষষ্ঠীর দিন তাঁদের উদ্ধার করে মানবিকতার নজির গড়লেন কাউন্সিলর। মুমুর্ষূ ওই তিন বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে তিনি হাসপাতলে ভর্তি করেন। ঘটনাটি উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের। ওই পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেবব্রত পাল এদিন তিন বৃদ্ধা-বৃদ্ধাকে উদ্ধার করেন। বর্তমানে তাঁদের হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। দীর্ঘদিন ধরে অনাহারে থাকার বলে তাঁদের শরীরে নানা ধরনের রোগ বাসা বেঁধেছে।
আরও পড়ুন: পরিচারিকার টোপ দিয়ে বৃদ্ধকে অপহরণ, ৩ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি, ধৃত ৪
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনজনের নাম হল শশধর রায় (৭২), রিনা রায় (৭০) এবং কাজল পোদ্দার (৯০)। শশধর এবং রিনা সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। অন্যদিকে, কাজল রিনা বড় দিদি। জানা গিয়েছে ওই তিনজন দীর্ঘদিন ধরে ওই ওয়ার্ডের একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করছিলেন। তবে বিগত তিন মাস ধরে তাঁদের তীব্র আর্থিক সমস্যা দেখা দেয়। তাঁদের দেখভাল করারও কেউ নেই। এই অবস্থায় কোনওভাবে মুড়ি ও জল খেয়ে কাটাচ্ছিলেন তাঁরা। মহাষষ্ঠীর দিন সেই খবর পাওয়া মাত্রই কাউন্সিলর তৎক্ষণাৎ অ্যাম্বুলেন্স ডেকে তিনজনকে বারাসত মেডিক্যাল কলেজে এবং হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন কাউন্সিলর। তিনি জানান, খবর পাওয়া মাত্রই তাঁদের উদ্ধার করেন। বারাসতের পুরপ্রধান অশনি মুখোপাধ্যায় জানান, দুর্দিনে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই তাঁদের কাজ। তাই তাঁরা নিজেদের কাজ করেছেন। তবে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনজনের শারীরিক অবস্থা খারাপ। তাই তাঁদের সঙ্গে খুব বেশি কথা বলা সম্ভব হয়নি।
পুরসভা সূত্রের খবর, পুরসভার কর্মীরা এদিন ডেঙ্গি নিধন অভিযানে বেরিয়েছিলেন। সেখানে তারা দেখতে পান, ওই ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘক্ষণ ডাকাডাকির পরেও কেউ ফ্ল্যাটের দরজা খোলেনি। তখন স্থানীয়রা সেখানে এসে বেশ কিছুক্ষণ ডাকাডাকি করেন। পরে শশধর রায় দরজা খোলেন। দরজা খুলতেই কর্মীরা দেখতে পান, ঘরের ভিতরে সবকিছু এলোমেলো অবস্থায় রয়েছে। ঘর থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে এবং অপরিচ্ছন্ন রয়েছে। তখনই তাঁরা বিষয়টি পুরসভার কাউন্সিলরকে জানান।
কাউন্সিলর জানিয়েছেন, সুস্থ হওয়ার পর ওই তিন বৃদ্ধ ও বৃদ্ধার দায়িত্ব পুরসভার পক্ষ থেকে নেওয়া হবে। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, তিনজনের শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। তবে তাঁদের চিকিৎসার জন্য সব রকমের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কোনওরকমের খামতি রাখা হচ্ছে না।