দলের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘোষণা করে নির্দল প্রার্থী হিসাবে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। সেই দলেরই বহিষ্কারের হাত থেকে বাঁচতে ভোটের লড়াই থেকে সরে দাঁড়ালেন গোবরডাঙা পুরসভার বিদায়ী পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত। রবিবার দলের দেওয়া সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সিকে চিঠি দিয়ে নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন প্রবীণ এই রাজনীতিক। সঙ্গে জানিয়েছেন, কর্মীদের দলের প্রার্থীর প্রাচারে ঝাঁপিয়ে পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি তৃণমূলের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘোষণা করে পুরভোটের নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পেশ করেন সুভাষবাবু। তার পর আপেল চিহ্নে ছেয়ে গিয়েছে গোবরডাঙার ৬ নম্বর ওয়ার্ড। মনোনয়ন পেশের পর তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘আমি অপমানিত। লোকসভা-বিধানসভা নির্বাচনে যারা বিজেপি এসে গেল বলে পাঁচিলের ওপরে বসেছিল তারা আজ দলের ক্ষমতায়। আর আমরা যারা লড়াই করলাম তারা ব্রাত্য। আমি দল থেকে চলে গেলাম। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার মনে থাকবেন।’
সুভাষ দত্ত মনোয়ন পেশের পরেই প্রচারে ঝাঁপান তাঁর অনুগামীরা। এরই মধ্যে নির্দল প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে বলে ঘোষণা করে ভোটের ময়দান থেকে সরে দাঁড়ানোর সময়সীমা বেঁধে দেয় তৃণমূল। সেই চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত টিকতে পারলেন না আশি ছুঁই ছুঁই সুভাষবাবু।
এদিন ভোটের লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করে সুভাষ দত্ত বলেন, ‘আমি সুব্রত বক্সিকে চিঠি দিয়ে আমার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছি। মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের অনুরোধ আমি ফেলতে পারিনি। দলের স্বার্থে আমি প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করে নিলাম।’ প্রশ্ন হল, যে দলের সঙ্গে তিনি প্রকাশ্যে বিচ্ছেদ ঘোষণা করেছিলেন, তার অনুরোধ, স্বার্থ হঠাৎ এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল কী করে?
বলে রাখি, গত পুরসভা নির্বাচনে গোবরডাঙার পুরপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন সুভাষবাবুর পরিবারের ৩ জন সদস্য। ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতে পুরপ্রধান হন সুভাষ দত্ত নিজে। ৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হয়েছিলেন তাঁর ভাই তথা অধুনা তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা কমিটির চেয়ারম্যান শংকর দত্ত। ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হয়েছিলেন শংকরবাবুর স্ত্রী বুলি দত্ত। কিন্তু লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে গোবরডাঙা পুর এলাকায় করুণ পরিণতি হয় তৃণমূলের। ১৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টিতে এগিয়ে যায় বিজেপি। এর পর সুভাষবাবুকে মুখ্য প্রশাসকের পদ থেকে সরিয়ে তুষার ঘোষকে সেই পদে বসায় দল। এবারের পুরভোটে সুভাষবাবুর পরিবারে তৃণমূলের একমাত্র টিকিটটি পেয়েছেন তাঁর ভাই শংকর দত্ত।