একাধিক প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। তাই কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে রেড রোডে দু’দিনের ধরনায় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১০০ দিনের কাজ ও আবাস যোজনা খাতে বাংলার ন্যায্য প্রাপ্য আটকে রাখার বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার হন। এই পরিস্থিতিতে প্রকল্পের কাজে কোনও ফাঁক রাখতে নারাজ নবান্ন। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্যপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলির নথিতে ১০০ শতাংশ উপভোক্তার আধার সংযুক্তিকরণ নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হয়েছে নবান্ন। ইতিমধ্যেই জেলাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই কাজ সম্পন্ন হলে টাকা না ছাড়ার আর কোনও টালবাহানা দেখাতে পারবে না কেন্দ্র বলে মনে করা হচ্ছে।
কেন এমন উদ্যোগ নবান্নের? নবান্ন সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় বরাদ্দ পেতে হলে প্রধান শর্ত হল আধার সংযুক্তিকরণ। তাই এই কাজে বিশেষ জোর দিচ্ছে রাজ্য সরকার। সূত্রের খবর, দুয়ারে সরকার শিবিরের ব্যস্ততার মধ্যেই কড়া বার্তা পাঠানো হয়েছে প্রত্যেক জেলাশাসককে। তাতে ১০০ দিনের কাজ, বার্ধক্যভাতা (ন্যাশনাল সোশ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রাম), জাতীয় গ্রামীণ জীবন–জীবিকা মিশন (আনন্দধারা) এবং আবাস যোজনার ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব আধার সংযুক্তিকরণের কাজ শেষ করার নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
আর কী জানা যাচ্ছে? এই আধার সংযুক্তিকরণের কাজে জেলাগুলির অগ্রগতির হারও বিস্তারিত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, রাজ্যে ১০০ দিনের কাজে সামগ্রিকভাবে ৯৭.৬ শতাংশের আধার সংযুক্তিকরণ হয়েছে। কেন্দ্র টাকা আটকে রেখেছে। তাই এই প্রকল্পের কোনও কাজ হচ্ছে না। তবুও আধারের ভিত্তিতে মজুরি দেওয়ার (আধার বেসড পেমেন্ট সিস্টেম) পরিকাঠামো তৈরি রাখা হচ্ছে। কেন্দ্র টাকা দিলেই তাঁরা পেয়ে প্রাপ্য পেয়ে যাবেন। এই নীতিতে একদিকে স্বচ্ছতা অন্যদিকে কেন্দ্রকে প্যাঁচে ফেলা যাবে।
কতদূর কাজ শেষ হয়েছে? এই আধার সংযুক্তিকরণের কাজ একেবারে শেষের দিকে নিয়ে আসা হয়েছে বলে খবর। দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহার, পূর্ব মেদিনীপুর এবং পূর্ব বর্ধমানে আধার সংযুক্তিকরণের কাজ ১০০ শতাংশ হয়েছে। আলিপুরদুয়ার, হুগলি, নদীয়া, বীরভুম, পশ্চিম মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৯৯ শতাংশ শেষ হয়েছে। আবাস যোজনায় সংযুক্তিকরণের কাজ এগিয়েছে ৯৩.২ শতাংশ। তবে এখন বাড়ি তৈরি হচ্ছে এমন উপভোক্তাদের মাত্র ১২.৬ শতাংশ ক্ষেত্রে আধার বেসড পেমেন্ট সিস্টেম নিশ্চিত করা গিয়েছে। ন্যাশনাল সোশ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রামের মোট ১৪ লক্ষ ৭২ হাজার ৪৬৬ জন উপভোক্তার মধ্যে ৯১.৫ শতাংশের আধার সংযুক্তিকরণ হয়েছে। আনন্দধারা প্রকল্পের প্রায় ১১ লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের মধ্যে আধার সংযুক্ত হয়েছে ৮৯.৮ শতাংশের। নবান্নের এক কর্তা বলেন, ‘পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যাচ্ছে, সামান্য কাজ বাকি রয়েছে। এই কাজ আমরা এক মাসের মধ্যে করে ফেলার টার্গেট নিচ্ছি। আর চারটি ক্ষেত্রেই আধার সংযুক্তিকরণে আমরা জাতীয় গড়ের থেকে এগিয়ে রয়েছি।’