কলাইকুন্ডার বৈঠক বিতর্ক অব্যাহতই রইল। কারণ বৈঠকের পর মুখ্যসচিব নিয়ে টানাপোড়েন চলেছে। সেখান থেকে কেন্দ্রকে ব্যাকফুটে যেতে হয়েছে। কারণ আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের টিকি ছুঁতে পারেনি নরেন্দ্র মোদীর সরকার। এবার বৈঠকের পাঁচদিন পর কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হল, পর্যালোচনা বৈঠক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কোনও অনুমতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ফলে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়ে গেল। যদিও আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছবি প্রকাশ করার দাবি তুলে ছিলেন। যা প্রকাশ করা হয়নি।
সোমবার মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠিতেই মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দেন, তিনি কলাইকুন্ডার বৈঠক থেকে মুখ্যসচিবকে নিয়ে দিঘায় বিপর্যয় খতিয়ে দেখতে রওনা হওয়ার আগে ‘নির্দিষ্ট এবং স্পষ্টভাবে’ প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি চেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী সেই অনুমতি দিয়েছিলেন। এই দাবি মুখ্যমন্ত্রী সেদিনই করেছিলেন। কিন্তু পাঁচদিন পর মোদী সরকারের শীর্ষ সূত্রের দাবি, প্রধানমন্ত্রী এমন কোনও অনুমতি দেননি। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে আজ মুখ্যমন্ত্রীর পাঁচ পৃষ্ঠার চিঠির প্রেক্ষিতে ৯ দফা জবাব দেওয়া হয়েছে। সূত্রের দাবি, একই জবাব রাজ্যকেও পাঠানো হবে। কিন্তু এই পন্থাকে ‘আফটার থট’ বলে মনে করা হচ্ছে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ইয়াসের পর্যালোচনায় প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বৈঠক ঘিরে কেন্দ্র–রাজ্য সংঘাত তৈরি হয়। মুখ্যসচিবকে দিল্লিতে রিপোর্ট করতে বলা হয়। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর চিঠিতে জানান, তাঁর আগেভাগেই ইয়াসের ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখার কর্মসূচি ছিল। প্রধানমন্ত্রীর সফরের জন্য তিনি তা রদবদল করেন। কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রের দাবি, প্রধানমন্ত্রীও ইয়াসের ক্ষয়ক্ষতি দেখতেই গিয়েছিলেন। তাঁর কর্মসূচি ঝড় আসার আগেই চূড়ান্ত করে ফেলা সম্ভব ছিল না।
মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে লিখেছিলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন বলেই কলাইকুন্ডা যাওয়ার আগে হিঙ্গলগঞ্জ ও সাগরে যান। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর চপারের জন্যই সাগরে তাঁর চপার আটকে দেওয়া হয়। ফলে ২০ মিনিট সেখানে অপেক্ষা করেন। তা সত্ত্বেও তিনি বেলা আড়াইটের আগে কলাইকুন্ডা পৌঁছে গিয়েছিলেন। কেন্দ্রের পাল্টা দাবি, প্রধানমন্ত্রী কলাইকুন্ডা পৌঁছন বেলা ১টা ৫৯ মিনিটে। মমতা তারপরে বেলা ২টো ১০ মিনিটে সেখানে পৌঁছেছিলেন। প্রত্যাশিত ছিল, তিনি প্রধানমন্ত্রীর আগে পৌঁছবেন। প্রধানমন্ত্রীই তাঁর জন্য অপেক্ষা করেছিলেন।
কেন্দ্রের সূত্রের যুক্তি, মুখ্যমন্ত্রী চপার থেকে নেমে বৈঠকের জন্য নির্দিষ্ট ভবনে পৌঁছন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তিনি বেলা ২টা ৩৫ মিনিটে রওনা হয়ে যান। অর্থাৎ কলাইকুন্ডায় তিনি মাত্র ২৫ মিনিট ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর আগেই তিনি বেরিয়ে যান। যা ‘প্রোটোকল নিয়মের’ বিরুদ্ধে। তিনি অফিসারদেরও বৈঠকে যোগ দিতে দেননি বলে ওই সূত্রের অভিযোগ। মমতা জানিয়েছিলেন, তাঁর দিঘা যাওয়ার সফরসূচি আগে থেকেই ঠিক ছিল। আর কেন্দ্রের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে বৈঠকে যোগ দিতে রাজি ছিলেন। কিন্তু বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বৈঠকে থাকবেন জেনে মত বদলে ফেলেন।
কেন্দ্রীয় সূত্রের দাবি, স্থানীয় বিধায়ক বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। অবিজেপি রাজ্যগুলিতে একাধিক বৈঠকে অন্য দলের প্রতিনিধিদের ডাকা হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য মনে করিয়ে দেয়, গুজরাতে প্রধানমন্ত্রী যখন ঘূর্ণিঝড়ের পর্যালোচনা করতে গিয়েছিলেন, তখন সেখানে কংগ্রেসের বিরোধী দলনেতাকে ডাকা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী দিল্লিতেও কোভিড নিয়ে বিরোধী শিবিরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেননি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এসে অনড় মনোভাব দেখালেন।