বোলপুরে অমিত শাহের পালটা কর্মসূচিতে রবীন্দ্রনাথকে ব্যবহার করে বিজেপির উদ্দেশে আক্রমণ শানালেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন মমতার ভাষণজুড়ে ছিল শুধু বিজেপি বিরোধিতা। সঙ্গে এদিনও বিজেপিকে ‘বহিরাগত’ প্রমাণ করতে মরিয়া ছিলেন তিনি।
এদিন মমতা বেশি সময় খরচ না করে শুরু থেকেই বিজেপির উদ্দেশে আক্রমণ শানান। বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে আমরা লক্ষ্য করছি, কথায়, কাব্যে, কুকথায়, অকথায়, যে ভাবে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কেন্দ্র করে, বিশ্বভারতীকে কেন্দ্র করে, শান্তিনিকেতনকে কেন্দ্র করে, আশ্রমিক যে ভাই বোনেরা আছেন এমনকী অমার্ত্য সেন পর্যন্ত এই আক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি। এই অবস্থায় একবার প্রতিবাদের ভাষাকে জোরালো করার জন্য আজকে বোলপুরে রাঙা মাটিতে আমার আসা’।
সঙ্গে তৃণমূলনেত্রীর আশ্বাসবাণী, ‘কবিগুরু যাদের সাথে থাকে তাদের কোনও কিছু চিন্তা করতে হয় না’। এমনকী বিজেপির ‘সোনার বাংলা’ গড়ার প্রতিশ্রতিকেও রবীন্দ্রনাথ দিয়ে প্রতিহত করার চেষ্টা করেন তিনি। বলেন, ‘অকথা, কুকথা, দাঙ্গাবাজের সমস্ত প্রাচীর ভেঙে দেও। এমাটি সোনার বাংলাকে উপহার দিয়েছে, নতুন করে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখার দরকার নেই। সোনার বাংলা সৃষ্টি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের’।
এদিনের সভায় বিজেপির উদ্দেশে এমনই একের পর এক আক্রমণ শানান তিনি। এমনকী গ্রামে বহিরাগত দেখলে থানায় FIR করার নির্দেশ দেন তিনি। বলেন, যখন দেখি বিশ্বভারতীর বুকে পাঁচিল গেঁথে কারাগারে পরিণত করা হয়, তখন বলি বাঁধ ভেঙে দেও... ভাঙো। আমার ভাল লাগে না।
বিশ্বভারতীর কাছে দাঁড়িয়ে মমতার আক্ষেপ, ‘যখন দেখি, বিশ্বভারতীকে কেন্দ্র করে একটা জঘন্য ধর্মান্ধ রাজনীতি চলছে। আমার ভাল লাগে না। এক ঘৃণ্য রাজনীতি এখানে আমদানি করা হয়েছে। যারা আমাদের ধর্মটাকে ভুলিয়ে দিচ্ছে। হিন্দু ধর্মটা তারা জানে না’।
বিজেপি নেতাদের মধ্যাহ্নভোজ নিয়ে এদিনও ফের আক্রমণ শানান তৃণমূলনেত্রী। বলেন, ‘বাংলায় ইলেকশনের জন্য আসছে। আগে তো পাত্তা ছিল না। প্রতি সপ্তাহে একবার চাই সাথে ফাইভ স্টারের খাবার। আর দেখাচ্ছে আদিবাসীর পাহারাদার’।
মমতার দাবি, ‘আমরা ৩৬৫ সকাল থেকে রাত রবীন্দ্রনাথ করি। ৩৬৫ দিন নজরুল করি, ৩৬৫ দিন গান্ধীজি করি, ৩৬৫ দিন নেজাজি করি’। সঙ্গে বিজেপিকে তাঁর কটাক্ষ, ‘এখানে এসে শুধু ফেক পলিটিক্স। ফেকের ফেক, ফেক ভিডিয়ো, ফেক কথাবার্তা। আর মানুষে মানুষে দাঙ্গা লাগিয়ে দেও’।
বিজেপি টাকা দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করে মমতা বলেন, ‘ইলেকশন আসবে টাকা দিতে শুরু করবে। ইতিমধ্যে গ্রামে গ্রামে দিতেও শুরু করেছে। টাকা দিলে নিয়ে নিন বিজেপিকে ফিরিয়ে দিন। আজকে বলছে রবীন্দ্রনাথের লেখা জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করবে। আমি শুধু বলি একটু টাচ করে দেখ’।
এমনকী বিধায়কদের দলত্যাগেরও কড়া সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, ‘ভাবছে টাকা দিয়ে কয়েকটা এমএলএ কিনে নিয়ে যাবে। তাও সেগুলো পচাধচা। টাকা দিয়ে তৃণমূলটাকে খেয়ে নেবেন? এত সোজা?’
এদিন তৃণমূলনেত্রীর পদযাত্রায় ছিল চোখে পড়ার মতো ভিড়। ভিড় থেকে আপ্লুত জেলা তৃণমূল সভাপতি থেকে মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ও।