বসিরহাট আদালত চত্বরে আত্মবিশ্বাসী মেজাজ দেখা গিয়েছিল শেখ শাহজাহানকে। যে ভঙ্গিমায় তর্জনী তুলেছিলেন, তাতে অনেকেই মনে করেছিলেন দাপট অব্যাহত থাকবে গ্রেফতার হওয়ার পরেও। কিন্তু সিআইডি’র সদর দফতর ভবানী ভবনে তদন্তকারীরা ধৃত তৃণমূল কংগ্রেস নেতাকে দফায় দফায় জেরা করতেই ধীরে ধীরে সেই মেজাজ উবে যায় সন্দেশখালির ‘বাঘের’। ঔদ্ধত্য এখন সহযোগিতায় পরিণত হয়েছে। এমনকী গ্রেফতার হওয়ার আগে ৫৫ দিন কোথায় কীভাবে গা ঢাকা দিয়েছিলেন জেরায় শাহজাহান তা জানিয়েছেন বলে সূত্রের খবর।
এদিকে ভবানী ভবনে দফায় দফায় জেরার ফলে ভেঙে পড়েছেন শাহজাহান। শুরুতে শাহজাহান দাবি করছিলেন, পুলিশকে যা বলেছেন প্রথমে, সেটাই শেষ কথা। বারবার এক কথা বলতে রাজি নন তিনি। খাওয়াদাওয়া নিয়েও নানা দাবি করছিলেন। কিন্তু টানা জেরার মুখে ভেঙে পড়লেন শাহজাহান। কারণ তিনি বুঝে গিয়েছেন দল আর তাঁর পাশে নেই। সিআইডি সূত্রে খবর, গ্রেফতারের আগে ৫৫ দিন কী কী করেছেন সেটা জেরায় জানিয়েছেন শাহজাহান। তিনি জেরায় স্বীকার করেছেন, ৫ জানুয়ারি ইডির উপর হামলার পরই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েই অনুগামীদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে সেটা ঠিক করা হয়।
আরও পড়ুন: ঘরের ভিতর থেকে বের হচ্ছে দুর্গন্ধ, কাজ শিকেয় যুগ্ম পুর কমিশনারের, কী মিলল?
অন্যদিকে তদন্তকারীদের একের পর এক প্রশ্নবাণে শুক্রবার থেকে ধীরে ধীরে বিধ্বস্ত হতে শুরু করেন শাহজাহান। সিআইডি সূত্রে খবর, শাহজাহান জেরায় জানান, গত ৫ জানুয়ারির পর থেকে তিনি সন্দেশখালিতেই ছিলেন। নানা দ্বীপে অনুগামীদের বাড়িতে গা ঢাকা দিয়েছিলেন। নিয়মিত অনুগামীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। প্রায় দু’মাস ধরে তাঁর শিখিয়ে দেওয়া তথ্য অনুগামীরা বলছিলেন। গত বৃহস্পতিবার মিনাখাঁ থেকে শাহজাহানকে গ্রেফতার করেছে রাজ্য পুলিশ। তারপর সোজা ভবানী ভবনে। খাবার নিয়েও তাঁর আবদার শুরু হয়েছিল। কিন্তু টানা জেরার মুখে অবশেষে শাহজাহান মনের জোর হারাতে শুরু করেছে।
এছাড়া শাহজাহানই সকলকে শিখিয়ে দিচ্ছিলেন কোথায় যেতে হবে এবং কাকে কী বলতে হবে। কিন্তু এত পরিকল্পনা পরও অবশেষে ধরা দিতেই হল শেখ শাহজাহানকে। যে ইডি কর্তা শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন সেই গৌরব ভারিলকে তলব করেছে সিআইডি। তার বয়ানও রেকর্ড করা হবে বলে সূত্রের খবর। এমনকী কি নথি, তথ্যপ্রমাণ ইডির হাতে আছে তাও খতিয়ে দেখবে সিআইডি। শাহজাহানের থেকে প্রাপ্ত তথ্য আদালতে পেশ করবে সিআইডি।