রাজ্যের মুখ্যসচিবের যে তথ্য সংগ্রহ করার কথা ছিল তা কার্যত হয়নি। এমনকী তাঁর অধীনে যে সংস্থা রয়েছে, তারা নিজেদের দাবি মতো কাজ করেছে কি না, সে সম্পর্কেও তিনি কিছু জানেন না। সাঁতরাগাছি ঝিলের দূষণ নিয়ে এমন তথ্যই উঠে আসে। আর তার জেরে এই মামলার শুনানিতে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে কড়া ভাষায় ভর্ৎসনা করল জাতীয় পরিবেশ আদালত। একইসঙ্গে সাঁতরাগাছি ঝিলের দূষণ মামলায় আদালতের ক্ষোভ টের পেয়েছে রেলও। আসলে মামলা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ মুখ্যসচিব ঠিক মতো করেননি বলেই কড়া ভাষা শুনতে হয়েছে। রেলের আইনজীবী সম্পর্কেও আদালতের মন্তব্য, ‘এটা দুঃখজনক ঘটনা যে, মামলার ফাইল না পড়েই সংশ্লিষ্ট আইনজীবী আদালতে হাজির হয়েছেন।’
এদিকে সাঁতরাগাছি ঝিলের দূষণ কমানো নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে রাজ্য ও রেলের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। এই ঝিলের দূষণ কমাতে একযোগে কাজ করার জন্য রাজ্যের মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে ও রেলের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল পরিবেশ আদালত। সেটা ছিল অক্টোবর মাস। কিন্তু কমিটির বৈঠক হলেও বাস্তবায়িত হয়নি কোনও কিছুই। আর তা জানতে পেরে আদালতের মন্তব্য, ‘রাজ্যের মুখ্যসচিবের চেয়ারম্যানশিপের অধীনে একটি কমিটি গঠন করা হলেও এটা দেখা যাচ্ছে, ঝিলের দূষণ কমানোর সঙ্গে যুক্ত পক্ষরা পরস্পর বিরোধী মন্তব্য করছেন। কাজের দায়িত্ব এক দফতর আর এক দফতরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
অন্যদিকে নভেম্বর মাসে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ঝিলে সরাসরি মেশা তরল বর্জ্যের দূষণ কমাতে প্রস্তাবিত নিকাশি পরিশোধন প্লান্ট তৈরির জন্য জমি দেবে রেল। আর তা গড়ে তুলতে জমির জন্য নভেম্বর মাসেই কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ) রেলের অনলাইন পোর্টালে আবেদন করে ৩ ফেব্রুয়ারি বলে হলফনামা দিয়ে আদালতকে জানায় রাজ্য। কিন্তু সেই আবেদনের পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ কী, সেটা কেন হলফনামায় উল্লেখ নেই? এমন প্রশ্নেই উষ্মাপ্রকাশ করে আদালত। মামলার আবেদনকারী সুভাষ দত্ত বলেছেন, ‘সাঁতরাগাছি ঝিলের মামলা গত সাত বছর ধরে চলছে। এখনও ঝিলের দূষণ নিয়ন্ত্রণে রাজ্য ও রেল কোনও সদর্থক পদক্ষেপ করেনি। পরিবেশ আদালতের কড়া মন্তব্যে দু’পক্ষের বোধোদয় হয় কি না, সেটাই দেখার।’
আরও পড়ুন: রাজ্য বাজেটে ডেঙ্গি পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ, কেন্দ্রীয় পোর্টালে তথ্য নেই
এছাড়া রেলের যে দায়িত্ব ছিল সেটা তারা পালন করেছে কি না, তার কোনও উল্লেখ নেই বলে মন্তব্য করে আদালত। পরিবেশ আদালতের পর্যবেক্ষণ, মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হলেও তাঁর অধীনে সংশ্লিষ্ট দফতর এবং রেলের থেকেও তথ্য জোগাড়ে মুখ্যসচিব পুরোপুরি ব্যর্থ। আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আর দক্ষিণ–পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে, জমির আবেদন নিয়ে তাদের সিদ্ধান্ত জানাতে। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১৮ মার্চ।