লকডাউনের বাজারে দার্জিলিং-কালিম্পঙের পর্যটন ব্যবসা লাটে উঠলেও দিব্যি রয়েছেন সিকিমের হোটেল মালিকরা, সৌজন্যে রাজ্য সরকারের নীতি।
সিকিম সরকারের নির্দেশিকায় রাজ্যের বাইরে থেকে আসা বাসিন্দাদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকা আবশ্যিক করা হলেও তাঁদের হোম কোয়ারেন্টাইনের সুবিধা দেওয়া হয়নি। গরিব-গুর্বোর জন্য সরকারি ব্যবস্থায় কোয়ারেন্টাইন সেন্টার রয়েছে রাজ্যে ঢোকার মুখে রংপোর মতো জায়গায়। সেখানকার ব্যবস্থা পছন্দ না হলে যাঁদের আর্থিক সঙ্গতি রয়েছে, তাঁরা ডেরা বাঁধছেন বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেল-রিসর্টে।
সরকার থেকে নির্দেশিকা জারি করে সব মানের হোটেলে থাকা-খাওয়ার খরচ দিনপ্রতি গড়ে ১,০০০ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তাই কোয়ারেন্টাইন পর্বে মনোরম হোটেলে থাকার বাসনা পূর্ণ করে নিচ্ছেন অনেকেই। সিকিমের হোটেল মালিকরাই জানাচ্ছেন, করোনা সংক্রমণের এই মরা মরশুমে স্থানীয় খদ্দেরদের কৃপায় চাঙ্গা রয়েছে ব্যবসা।
সিকিম যা পারে, তা পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ি অঞ্চলে সম্ভব নয়। এখানে সরকার থেকে হোটেলভাড়া বেঁধে দেওয়ার কোনও নির্দেশ জারি হয়নি। আবার ভিনরাজ্য থেকে ফেরা বাসিন্দাদের নিজের বাড়িতে কোয়ারেন্টাইন থাকার সুবিধাও দেওয়া হয়েছে। তার ওপর, দার্জিলিং-কালিম্পঙের হোটেলভাড়া সিকিমের তুলনায় বেশ খানিক বেশি হওয়ার ফলে ইচ্ছে থাকলেও শখ মেটানোর উপায় নেই স্থানীয়দের।
জটিল এই পরিস্থিতিতে লকডাউনের গেরোয় নাভিঃশ্বাস ওঠার উপক্রম বাংলার পাহাড়ে হোটেল ব্যবসায়ীদের।
পূর্ব সিকিমের জেলাশাসক রাজ যাদব জানিয়ছেন, ’ভিনরাজ্য থেকে ফেরা বাসিন্দাদের ৩০% -৪০% হোটেলে কোয়ারেন্টাইন থাকছেন। আমরা সমস্ত হোটেলে ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, স্ন্যাক্স আর ডিনার সমেত প্রতিদিনের ঘরভাড়া এক হাজার টাকা বেঁধে দিয়েছি। কোয়ারেন্টাইনের জন্য সরকার অধিগৃহীত অধিকাংশ হোটেলই স্টার ক্যাটেগরির।’
পাশাপাশি, গ্রেটার শিলিগুড়ি হোটেলিয়ার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক উজ্জ্বল ঘোষ জানাচ্ছেন, ‘শিলিগুড়িতে মোট ২১টি হোটেল কোয়ারেন্টাইনের জন্য নির্দিষ্ট করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কিন্তু তাতে লোকই আসছে না।’
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের আর এক হোটেল মালিক জানিয়েছেন, ‘বাংলার সরকার ভিনরাজ্য থেকে ফেরা বাসিন্দাদের জন্য বিনামূল্যে বা কম খরচে হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাধ্যতামূলক করেনি। তাঁদের নিজের বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে থাকার সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তা হলে কে আর টাকা খরচ করে হোটেলে থাকবেন!’
শৈলশহর দার্জিলিঙের বেশ কিছু হোটেল ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, ঘরভাড়ায় ৪০ শতাংশ ছাড় দিয়েও কোনও গ্রাহক পাচ্ছেন না। সিকিমে হোটেলভাড়ায় যে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, তা বাংলায় অমিল। তা ছাড়া খাবারের জন্য আলাদা খরচ গুনতে হচ্ছে বলে কেউ হোটেলে থাকতে চাইছেন না বলে তাঁদের দাবি।
দার্জিলিঙের গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-এর (জিটিএ)নিয়ন্ত্রণে থাকা পর্যটন বিভাগের সহকারী ডিরেক্টর সূরয শর্মা বলেছেন, ‘দার্জিলিঙে মাত্র তিনটি হোটেলে ভিনরাজ্য থেকে ফেরা বাসিন্দাদের বিনামূল্যে কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা হয়েছে। জিটিএ-র থেকে তাঁদের খাবার দেওয়া হচ্ছে।’