রবিবার ফের একবার ঠাকুরবাড়ির কোন্দল প্রকাশ্যে চলে এল। তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের বাড়ির দরজা ভাঙতে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করতে দেখা যায় খোদ কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরকে। তৃণমূল নেত্রীর বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেন তিনি এবং তাঁর অনুগামীরা। এই সবের মাঝেই তৃণমূল কংগ্রেস অভিযোগ করল, ঠাকুরবাড়িতে মন্দিরে জুতো পরেই প্রবেশ করেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সেই অভিযোগের পক্ষে একটি ভিডিয়ো (যদিও ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করতে পারেনি হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা) প্রকাশ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেখানে দেখা গিয়েছে হলুদ জামা পরিহিত শান্তনু ঠাকুর একটি চেয়ারে বসে আছেন। তাঁর সামনেই সম্ভবত প্রণামীর থালা। আর সেখানে একজন জুতো পরে দাঁড়িয়ে আছেন চৌকাঠের পাশেই। (আরও পড়ুন: 'তৃণমূল করলে নাগরিকত্ব নয়' মন্তব্যের জের, 'কমিশনের নির্দেশে' শান্তনুর নামে FIR)
আরও পড়ুন: পূর্ব ভারতে 'চমক' দেখাবে BJP, বাংলাতে হবে অবাক করা ফল, বড় দাবি প্রশান্ত কিশোরের
এই ভিডিয়ো প্রকাশ করে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার একটি পোস্টে লেখা হয়েছে, 'আজ বিজেপির সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের সামনেই কেন্দ্রীয় বাহিনী জুতা পরে মন্দির চত্বরে প্রবেশ করে। ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়িকে অপবিত্র করা হয়। সেই সময় দর্শকের ভূমিকায় ছিলেন শান্তনু। এটাই অবশ্য তাঁর প্রথম অপরাধ নয় - এর আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ঠাকুরবাড়িতে দর্শন করতে গিয়েছিলেন এবং জোর করে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। তখনও এই একই ঘটনা দেখা গিয়েছিল। মতুয়া সম্প্রদায়ের ভাবাবেগের প্রতি কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই শান্তনুর। এমন একজন মানুষকে জমিদার বলে অভিহিত করা ছাড়া আর উপায় নেই!' অপর এক বার্তায় তৃণমূল লেখে, 'শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্ম বার্ষিকীর একদিন পরে শান্তনু ঠাকুর এভাবে সম্মান জ্ঞাপন করলেন তাঁকে। আবারও বিজেপি এবং মোদীর পরিবারের বাংলা বিরোধী নোভাব সামনে এসেছে। বাংলার প্রতি তাঁদের কোনও সম্মান নেই।'
এদিকে গতকালকের ঘটনা প্রসঙ্গে মুখ খোলেন মমতাবালা। সেই সময় তাঁর পাশে ছিলেন বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস। মমতাবালা অভিযোগ করেন, 'বড়মার ঘরে... যেখানে আমি থাকি, সেই ঘরে হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ঢোকে শান্তনু। সেখানে জুতো পায়ে ঢোকে কেন্দ্রীয় বাহিনী।' মমতাবালার বক্তব্য, 'বড়মা বেঁচে থাকা অবস্থায় কেন ওরা ঘরে দখল নিতে আসেনি। কেনই বা শান্তনু ঠাকুরদের জন্ম এই বাড়িতে হয়নি? কারণ আমার শ্বশুরমশাই প্রমথরঞ্জন ঠাকুর ওদের বাড়ি থেকে বিতাড়িত করে দিয়েছিল।'
প্রসঙ্গত, ঠাকুরবাড়ির দুই সদস্য মমতাবালা এবং শান্তনুর মধ্যে কোন্দল আজকের নয়। ২০১৯ সালে শান্তনু বিজেপিতে যোগদান করলে সেই কোন্দল আরও বাড়ে। গত লোকসভা নির্বাচনে মমতাবালাকে হারিয়ে জয়ী হন শান্তনু ঠাকুর। পরে সিএএ ইস্যুতে দুই পক্ষের সংঘাত আরও চরমে গিয়ে পৌঁছায়। আর গতকালকের ঘটনা প্রসঙ্গে তৃণমূলের অভিযোগ, বড়মা বীণাপানি দেবীর ঘর দখল করতেই হামলা শান্তনুর। দরজা ভেঙে ঘর দখল করে ভিতরে বসেও পড়েন শান্তনু ঠাকুর, তাঁর ভাই-সহ পরিবারের লোকজনেরা। গাইঘাটা থানায় শান্তনু ঠাকুর-সহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন মমতাবালা ঠাকুর।
এদিকে এই গোটা ঘটনা প্রসঙ্গে শান্তনুর বক্তব্য, 'আমার ঠাকুমা-ঠাকুরদাদার ঘর। অনেকবার ঢুকতে চেয়েছি। ওরা দখল করে রেখেছিল। এবার হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে হোক বা যেভাবেই হোক আমি ঢুকেছি। আমার ঠাকুরদার ঘর। এখানে কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম থাকবে? আমি কেন এসেছি, কাউকে কোনও কৈফিয়ত দেব না। এই বাড়িতে আমাদের অধিকার আছে সেই অধিকার আমরা বুঝে নিয়েছি।'