দু’দিন আগেই আসানসোলে বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক ইডি–কে ভর্ৎসনা করেছিলেন। তদন্তের গতিপ্রকৃতি এবং মামলা নয়াদিল্লিতে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করতেই এই ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছিল। ইতিমধ্যেই অনুব্রত মণ্ডল এবং গরুপাচার নিয়ে চার্জশিট জমা পড়েছে। যা ইংরেজিতে লেখা। সেখানে অনুব্রত মণ্ডলের বক্তব্য পুরোটাই বাংলায় লেখা। কেষ্টর জমি–বাড়ি, থেকে সম্পত্তির যে সব হিসেব ইডি–কে দিয়েছেন অনুব্রত সেগুলি সব বাংলায় লেখা। দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে গরুপাচার মামলার চার্জশিট সরেজমিনে দেখতে গিয়ে আইনজীবীরা এই তথ্যই আবিষ্কার করেছেন। সুতরাং বিচারের প্রক্রিয়া এগোবে কেমন করে তা নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে। এখন অনুব্রতের বাংলা বয়ানের তর্জমা করার জন্য আবার আদালতের কাছে আবেদন জানানো হবে বলে খবর।
এদিকে ইডি চার্জশিট জমা দিলেও এসব দেখেনি। আর সেসব না দেখেই অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছে তারা। সেখানে অভিযোগ করা হয়েছে, গরু পাচার থেকে অনুব্রত মণ্ডল আয় করেছেন ১২ কোটি টাকা। সেই টাকা তাঁর মেয়ে সুকন্যা এবং নানা ব্যক্তিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে। যদিও অনুব্রত তাঁর বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি সম্পর্কে ইডিকে জানান, জমির দালালি এবং চালের ব্যবসা করেই এই সম্পত্তি তিনি বানিয়েছেন। তবে এখানে দুটি বিষয় আছে। এক, অনুব্রত মণ্ডল তাঁর বক্তব্যের সপক্ষে যেমন সব নথি দিতে পারেননি তেমনই ইডির পেশ করা চার্জশিটে সব প্রমাণও নেই। তার উপর আবার অনুব্রতর সব হিসেবনিকেশই বাংলায় লেখা। এখনও তার অনুবাদ মিলছে না।
অন্যদিকে ইডি অনুব্রত মণ্ডলকে নয়াদিল্লিতে নিয়ে গিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে যে, অনুব্রত বাংলা ছাড়া কিছুই জানেন না। অনুব্রতর থেকে তথ্য জানতে বাংলা জানা অফিসারকে নিয়োগ করা হয়। তিনিই ওই বয়ান নথিভুক্ত করেন। অনুব্রত মণ্ডলের আইনজীবীদের তাই প্রশ্ন, বাংলায় বয়ান নথিবদ্ধ করা হতেই পারে। কিন্তু তা আদালতে গ্রাহ্য হল কী করে? বিচারকের সব নথি পড়ে এবং বুঝে তা গ্রহণ করাই নিয়ম। এই নিয়ে পরে আদালতে প্রশ্ন তোলার পরিকল্পনা করছেন অনুব্রতর আইনজীবীরা।
আরও পড়ুন: হিন্দু ক্যালেন্ডার–পঞ্জিকা ব্যবহার করুন, উত্তরপ্রদেশ পুলিশকে নির্দেশ ডিজি’র
আর কী জানা যাচ্ছে? অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা হলেও এখনও চার্জ গঠন হয়নি। এই চার্জশিট নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন আছে। ফলে গরুপাচার মামলায় অনুব্রতকে পুরোপুরি বাঁধা যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান সবপক্ষই। তবে অনুব্রতের আইনজীবীরা ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২০৭ ধারা মেনে পুলিশের যাবতীয় নথি, রেকর্ড করা বয়ান হাতে পেতে আবেদন জানাবেন। তখন বাংলায় লেখা বয়ানের তর্জমাও চাওয়া হবে। তবে এই বিষয়ে অনুব্রত মণ্ডলের আইনজীবী সম্পৃক্তা ঘোষাল মনে করেন, নয়াদিল্লি হাইকোর্টে অনুব্রতের জামিনের আবেদনে ইতিবাচক রায় মিলবে।