জলাশয় বুজিয়ে বহুতল করার অভিযোগ বহুবার উঠেছে। এই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয়েছে। এমনকী কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজ্য সরকারের কাছে নথি তলব করেছে। এমন আবহে পূর্বস্থলী ১ ব্লকের তিন জলাশয়কে যাতে জীববৈচিত্র্য হেরিটেজ সাইটের তকমা পায় তার জন্য পরিবেশমন্ত্রী গোলাম রব্বানির কাছে আবেদন করলেন রাজ্যের প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। জলাশয় বাঁচলে জলজ প্রাণী বাঁচবে এই যুক্তি রয়েছে প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীর। সেই জায়গা থেকে এমন আবেদন বলে মনে করা হচ্ছে। তার উপর জলাশয়গুলির সঙ্গে নানা ইতিহাস জড়িয়ে আছে। সেগুলিও বাঁচবে।
এদিকে জলাশয় ও চুনো মাছ রক্ষা করার বিষয় নিয়ে বহুদিন ধরেই প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন স্বপন দেবনাথ। ডিসেম্বর মাসে তাঁর উদ্যোগে খাল, বিল, চুনো মাছ উৎসব হয়। এই বিষয়ে মন্ত্রী জানান, চাঁদের বিলের আয়তন চার কিলোমিটার। ৭২ একর জমিতে আছে বাঁশদহ বিল। জলাশয়গুলিতে জড়িয়ে রয়েছে নানা ইতিহাস। নানা প্রজাতির মাছ এবং গেঁড়ি, গুগলি, কাঁকড়া তাতে মেলে। জলাশয়ের পাড়ে প্রজাপতি, ঝিঁঝি পোকা, কেঁচো, শামুকের উপস্থিতি রয়েছে। তবে মন্ত্রী বলেন, ‘রাজ্যে খুব কম এলাকা আছে জীববৈচিত্র্য হেরিটেজ সাইটের মধ্যে। পূর্বস্থলীতে থাকা তিনটি জলাশয়ের বিষয়ে পরিবেশ মন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। ইতিবাচক আশ্বাস মিলেছে।’
অন্যদিকে পূর্বস্থলীতে চৈতন্যদেবের নানা স্মৃতি রয়েছে। পূর্বস্থলী ১ ব্লকে এই স্মৃতি থাকায় এখানে বহু পর্যটকও ভিড় করেন। বিশেষ করে শীতকালে এখানে মানুষের একটা সমাগম ঘটে। শ্রীরামপুরে রয়েছে চৈতন্যদেবের বাল্যশিক্ষার স্থান, বাসুদেব সার্বভৌমের মতো ভারত বিখ্যাত পণ্ডিতের জন্মস্থান। সুলুন্টুতে আছে প্রাচীন মসজিদ। তাই সারা বছর এখানে প্রচুর মানুষ আসেন। বাঁশদহ বিলে আসে পরিযায়ী পাখিও। এই সব কারণে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জীববৈচিত্র্য হেরিটেজ সাইটের তকমার দাবি তুলেছেন। এটা পেলে তিন জলাশয়ের আকর্ষণ বাড়বে।
আরও পড়ুন: চর কাটতে আনা হচ্ছে অত্যাধুনিক ড্রেজার, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই গঙ্গাসাগরে কাজ শুরু
এখন জলাশয় বাঁচানোর উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। কারণ জলাশয় না বাঁচলে ইকোসিস্টেম নষ্ট হবে। তাছাড়া প্রত্যেক বছর যে পরিমাণ গরম পড়ছে তাতে মানুষ মারা যেতে শুরু করেছে। এই জলাশয় বেশি পরিমাণে থাকলে গরমের মাত্রা অনেকটা কমবে বলে মনে করেন পরিবেশবিদরা। এমন পরিস্থিতিতে জীববৈচিত্র্য পর্ষদের একটি উচ্চপর্যায়ের দল কালনার ছাড়িগঙ্গা পরিদর্শন করেছেন। মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের দাবি, কালনার বিষয়টি নিয়ে পরিবেশমন্ত্রী এবং জীববৈচিত্র্য পর্ষদের চেয়ারম্যান হিমাদ্রিশেখর দেবনাথের সঙ্গেও বিস্তারিত কথা হয়েছে। জীববৈচিত্র্য পর্ষদের চেয়ারম্যান পরিবেশ মন্ত্রীকে জানান, কালনা শহরে দ্রষ্টব্য স্থানগুলিতে প্রচুর পর্যটক আসেন। ছাড়িগঙ্গার পরিবেশও মনোরম হওয়ায় ভাল কিছু করা যেতে পারে।