দুই বাংলার মধ্যে রয়েছে সংস্কৃতির সম্পর্ক। ভালবাসা–সৌভ্রাতৃত্ববোধ তো দেখা যায় পরস্পরের প্রতি। এবার সেসবেরই ‘মিলনস্থল’ হয়ে উঠল মেদিনীপুর শহর। আজ, শুক্রবার বাংলাদেশ থেকে মেদিনীপুরে আসে একটি বিশেষ ট্রেন। সেখানে প্রায় ২২৫৬ জন যাত্রী ছিল। যাঁদের নিয়ে বুধবার বাংলাদেশের রাজবাড়ি থেকে বিশেষ ট্রেনটি ছেড়ে এপারে এসেছে। এই ট্রেনটিই আবার ১৮ ফেব্রুয়ারি যাবে বাংলাদেশে। উরস উৎসবকে ঘিরে প্রত্যেকবারের মতো এবারও মেদিনীপুর শহরের জোড়া মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় বহু মানুষের ‘মিলনস্থল’ হয়ে উঠল। এই উৎসবে পালিত হচ্ছে মেদিনীপুর শহরের মসজিদ এলাকায়।
এখানে হজরত সৈয়দ শাহ মুর্শেদ আলি আল কাদেরির প্রয়াণ দিবস উপলক্ষ্যে উরস উৎসব পালিত হচ্ছে। তাই ওপার থেকে এপারে এসে মানুষ যেন চিরবন্ধনের স্বাদ পেলেন। হাসিখুশিতে হল নানান কথা। হজরত মহম্মদের ৩২তম এবং সুফি সাধনার আদিগুরু ‘বড় পীর সাহেব’ হজরত আবদুল কাদের জিলানির ১৯তম বংশধর মওলা পাক ৪ ফাল্গুন প্রয়াত হন। এই দিনে দেশ–বিদেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন তাঁদের গুরুকে স্মরণ করেন। তাই এই দিনকে উরস উৎসব বলা হয়। ধর্মীয় অনুষ্ঠান বড় আকার নেয় বলেই যোগ দিতে বাংলাদেশ থেকে মেদিনীপুরো আসেন ধর্মপ্রাণ মানুষেরা। যা পরিণত হয় মিলনস্থলে।
এদিকে এই উরস উৎসব আজ চালু হয়েছে এমন নয়। ১৯০৩ সাল থেকে দুই বাংলার মধ্যে এই বিশেষ ট্রেন পরিষেবা চালু রয়েছে। এখানে বহু ধর্মপ্রাণ মানুষ টাকা খরচ করে আসতে পারেন না। তাই এই বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়। উরস উৎসবকে ঘিরে বহু মানুষের সমাগম হয় মেদিনীপুরে। মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের পাশাপাশি সব ধর্মের মানুষই উরস উৎসবের দিনে জোড়া মসজিদে হাজির হন। এখানে একসপ্তাহ ধরে মেলা চলে। যা কেনেন বাংলাদেশের মানুষজন। এখন এই উৎসবকে কেন্দ্র করে ভাল ব্যবসা করে হোটেলগুলিও। এই কদিন হোটেল ভাড়াও বাড়ে ভালই। সব মিলিয়ে এই উরস উৎসবের মধ্যে দিয়ে চাঙ্গা হয় অর্থনীতি।
আরও পড়ুন: ‘টাকা না পাওয়া গেলে ১ মে থেকে আবাস হবে নিজেদের অর্থেই’, বিধানসভায় ঘোষণা মমতার
অন্যদিকে এই উৎসবে যাতে কোনও সমস্যা না হয় তার জন্য সবরকম ব্যবস্থা আগাম নেওয়া হয়। এই উৎসবের মুহূর্তে মেদিনীপুর পুরসভার পুরপ্রধান সৌমেন খান ফুল দিয়ে বাংলাদেশের মানুষদের অভ্যর্থনা জানান। তীর্থযাত্রীদের জল ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তীর্থযাত্রীদের যাতে অসুবিধে না হয় তার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থাও করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এখানে আসতে পারেন বলে সূত্রের খবর। এই উরস উৎসব নিয়ে মেদিনীপুর টাউন মুসলিম কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক তথা মেলা কমিটির সদস্য আবদুল ওয়াহেদ বলেন, ‘এবারেও বাংলাদেশের ট্রেনে করে বহু মানুষ এসেছেন। অনেকে বিমানে বা গাড়িতেও এসেছেন। যাতে কোনও সমস্যা না হয় সেদিকে রাখা হয়েছে নজরদারি।’