বিলকিস বানো ধর্ষণ কাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে এবার মহুয়া মৈত্রের প্রশংসা শোনা গেল বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে। আজ, মঙ্গলবার জয়নগরের প্রশাসনিক সভা থেকে বিলকিস বানো মামলার কথা তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই মহুয়া মৈত্রের প্রশংসা শোনা যায় তাঁর মুখে। তিনি জানান, বিলকিসের ধর্ষকদের ছেড়ে দেওয়া নিয়ে মহুয়াই মামলা করেছিলেন। আর সেই মামলায় জয় মিলেছে। যা একপ্রকার তৃণমূল কংগ্রেসেরও জয়। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার বললেন, ‘মহুয়াকে অন্যায় ভাবে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’
এদিকে সোমবারই বিলকিসের ধর্ষকদের ছেড়ে দেওয়ার মামলা নিয়ে মুখ খুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ জয়নগরের প্রশাসনিক সভায় বিষয়টি তুলে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গেল, ‘বিলকিস বানোর মামলায় ধর্ষকদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। আমাদের দলের মহুয়া মৈত্র, যিনি সাংসদ ছিলেন, জোর করে যাঁকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই মামলা কিন্তু তিনিই করেছিলেন। এমনকী মামলায় একটি পক্ষ ছিলেন মহুয়া। এটা কিন্তু তৃণমূলের বিরাট জয়।’ গুজরাট সরকারের বিরুদ্ধে বড় রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, বিলকিসকে গণধর্ষণ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের খুনের ঘটনায় মুক্তি পাওয়া ১১ জনকে আবার জেলে পাঠাতে হবে। ওই ধর্ষকদের মুক্তির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন মহুয়া মৈত্র।
অন্যদিকে মহুয়া মৈত্রের প্রশংসার পাশাপাশি বিজেপিকে তুলোধনা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘আমরা ধর্ষকদের প্রশ্রয় দিই না। মানুষকে বিচার দিই আমরা। কেউ কেউ বলে বেড়াচ্ছে, আমি নাকি গুন্ডাদের নেতা। সারাজীবন মানুষের কাজ করে এলাম। আমি মানুষের নেতা, নেতা নই আমি কর্মী। মানুষ আমার নেতা। আমি মানুষের পাহারাদার। কেউ বিপদে পড়লে, আপনাদের বলতে হয় না, আমরা ছুটে যাই।’
আরও পড়ুন: বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ কুণাল–দিলীপের, শাসক–বিরোধীর সাঁড়াশি চাপ
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সপক্ষে প্রমাণও রয়েছে। ২০২২ সালে বিলকিস বানো গণধর্ষণ মামলার রায়ের সিদ্ধান্তের পরে মহুয়া মৈত্র মামলা করেছিলেন। আবার এই ঘটনায় কলকাতায় গান্ধীমূর্তির পাদদেশে দু’দিন ধরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল তৃণমূল মহিলা কংগ্রেস। ২০০২ সালের গোধরায় সবরমতী এক্সপ্রেসে অগ্নিকাণ্ডের পর গুজরাট জুড়ে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। তখন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বিলকিস। কোলের সন্তান–সহ পরিবারের মোট ১৫ সদস্যের সঙ্গে গ্রাম ছেড়ে পালান তিনি। ৩ মার্চ ঝোপের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানেই কাস্তে, তলোয়ার, লাঠি নিয়ে ২০ জনের দল তাঁদের উপর চড়াও হয় এবং গণধর্ষণ করে বিলকিসকে। বিলকিস চোখের সামনে দেখেছিলেন, পরিবারের সাত সদস্যকে নৃশংসভাবে খুন হতে। খুন করা হয় বিলকিসের শিশু সন্তানকেও। দোষী সাব্যস্ত হওয়া ১১ জনকে ২০২৩ সালের স্বাধীনতা দিবসে গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুক্তি দেয় গুজরাট সরকার। জেলের বাইরে গলায় মালা পরিয়ে, মিষ্টিমুখ করিয়ে, ধ্বনি দিয়ে স্বাগত জানিয়ে সকলকে সংবর্ধনাও দেওয়া হয়। মহুয়া পৃথক জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। সে কথা তুলেই মহুয়ার প্রশংসা করলেন মুখ্যমন্ত্রী।