কোচবিহারে পা রেখেই প্রশাসনিক সভা থেকে রাজবংশী ভাষার ২১০টি স্কুলের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মধ্যে বেশিরভাগ স্কুলই রয়েছে কোচবিহার জেলায়। লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজবংশী ভাষায় স্কুলে পঠনপাঠনের স্বীকৃতি কার্যত মাস্টারস্টোক বলেই মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই প্রাথমিক স্তর থেকে রাজবংশী ভাষায় পড়ানোর স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আজ, সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোচবিহার জেলার রাসমেলা ময়দান থেকে রাজবংশী ভাষায় পড়ানোর স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।
এদিকে বহুদিন ধরে রাজবংশী সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এই দাবি ছিল। বামফ্রন্টের জমানায় তা পূরণ হয়নি। তবে আজ, সোমবার মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী এই ঘোষণা করার পর তাঁকে বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানান রাজবংশী সম্প্রদায়ের ব্যক্তিত্ব বংশীবদন বর্মণ। আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আজ আমি একটা বড় কাজ করলাম। অনেকগুলি ছোট ছোট রাজবংশী স্কুল আছে। সেগুলি সরকারি কোনও সুবিধা পেত না। ২১০টি স্কুলকে রাজ্য সরকারি স্বীকৃতি দিয়ে গেলাম। এবার থেকে রাজবংশী স্কুলের শিক্ষকরা সরকারি স্কুলের মতো বেতন পাবেন। পড়ুয়ারাও সব ধরনের সুবিধা পাবেন।’ করতালিতে ফেটে পড়ল রাসমেলা ময়দান।
অন্যদিকে এই স্কুলগুলিতে প্যারাটিচারদের আপাতত শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হবে। পরবর্তী ক্ষেত্রে স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে রাজবংশী ভাষায় পড়ানোর স্কুল শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। আজ, সোমবার থেকেই পুরোদমে শুরু হয়ে যাচ্ছে ক্লাস। ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতরের অফিসাররা। প্রায় ১২ হাজার পড়ুয়া এই রাজবংশী ভাষায় পড়ার সুযোগ পাবে। তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের আমলে উত্তরবঙ্গে হওয়া উন্নয়নের তালিকা তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একের পর এক নদীর উপর সেতু নির্মাণ থেকে রাস্তা সম্প্রসারণ, মন্দির সংস্কার থেকে বিমানবন্দর তৈরির তালিকা তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘আমি ভাঙি না গড়ি। তাই বলব, কারও প্ররোচনায় পা দেবেন না।’
আরও পড়ুন: বনবাংলো কারা দখল করে রেখেছে? এবার বন দফতরের কাছে রিপোর্ট তলব নবান্নের
এছাড়া ইতিমধ্যেই সাঁওতালি ভাষার মাধ্যমে স্কুল চালু করেছে রাজ্য সরকার। তার জন্য শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়াও স্কুল সার্ভিস কমিশন শুরু করেছে। সেই আঙ্গিকেই রাজবংশী ভাষাতেও রাজ্য সরকার শিক্ষক নিয়োগ করবে। এদিন ১৯৮টি প্রকল্পের শিলান্যাস এবং উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। মোট বরাদ্দের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের পর থেকে কোচবিহারে কর বাড়ানো হয়নি। সম্প্রতি পুরসভার পক্ষ থেকে বাসিন্দাদের বাড়িতে নোটিশ পাঠানো হচ্ছে। বিষয়টি জানতে পেরে সভাস্থলে দাঁড়িয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘অনেকে এই নিয়ে আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। পুরসভাকে বলব, নোটিশ পাঠানোর কাজ বন্ধ রাখুন।’ লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখেই রাজবংশী ভোটকে টার্গেট করতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই রাজবংশী ভাষায় পড়ানোর স্বীকৃতি দিলেন বলে অনেকের মত।