পর পর পাঁচটি সদ্যজাত শিশুকে নোংরা ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে চলে গিয়েছিল কেউ বা কারা। এমন ঘটনায় আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরে। তাদের উদ্ধার করে জেলা প্রশাসন চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিল। তারপর হোমে রাখা হয় তাদের। এই ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে শিশু কল্যাণ দফতর। তাই জেলা প্রশাসন ‘পালনা’ নামে একটি প্রকল্প চালু করল। পশ্চিম মেদিনীপুরের চারটি হাসপাতালে একটি করে বিশেষ প্রযুক্তির অস্থায়ী কক্ষ তৈরি করেছে। এটাকেই পালনা বলা হচ্ছে। এটাই রাজ্যের মধ্যে প্রথম উদ্যোগ। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঘাটাল, খড়গপুর মহকুমা হাসপাতাল ও চন্দ্রকোনা হাসপাতালে ওই ‘পালনা’ কক্ষগুলি রাখা হচ্ছে। যাতে সদ্যোজাত শিশুকে বাড়ি নিয়ে যেতে না চাইলে ওখানে রেখে দেওয়া হয়।
এদিকে সেখানে একটি করে বিছানা রাখা থাকছে। যার সঙ্গে একটি এলার্ম মেশিন যুক্ত থাকবে। ওই মেশিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে থাকবে। যাতে শিশু রেখে গেলেই এলার্ম বেজে উঠে। তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ওই শিশুকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। তারপর সদ্যজাত শিশুটিকে তুলে দেওয়া হবে শিশু কল্যাণ দফতরের হাতে। আজ, বৃহস্পতিবার এই প্রকল্প চালু করে জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি বলেন, ‘গত এক মাসে এই জেলায় পাঁচটি শিশু উদ্ধার হয়েছে ডাস্টবিন থেকে। ওদের কী দোষ? তাই পালনা প্রকল্প করা হয়েছে। যাতে অনাদরে থাকতে না হয় শিশুদের।’
অন্যদিকে এভাবেই সদ্যজাত শিশুদের ফেলে যাওয়া রোখার চেষ্টা করা হচ্ছে। আবার জেলার সরকারি হোম মেয়েদের মনের কথা জানতে একটি বক্সের ব্যবস্থা করেছে জেলা প্রশাসন। যেখানে ওই হোমে থেকে নিজেদের সমস্যা বা মনের কথা জানাতে পারেন মেয়েরা। ইতিমধ্যেই ১৬টি চিঠি জমা পড়েছে। যেখানে মনের কথা লিখিত আকারে জমা পড়েছে। আর সবটা খতিয়ে দেখছে জেলা প্রশাসন। এই ঘটনার কথা জানতে পেরে অন্যান্য জেলাতেও তা করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। যাতে কোনওভাবেই শিশুদের আঁস্তাকুড়ে ফেলে না জানান মায়েরা।
আরও পড়ুন: কাঁথি–তমলুক আসন জিততে নিদান শুভেন্দুর, আদি নেতাদের সম্মান দেওয়ার বার্তা
কেন এমন ঘটনা ঘটছে? জেলা প্রশাসন সূ্ত্রে খবর, প্রেম করে পালিয়ে আসার পর অনেকে গর্ভবতী হচ্ছেন। আর সেই সন্তানকে নিতে অস্বীকার করছেন প্রেমিক। বিয়ের পরও কন্যাসন্তান হলে অনেকে ফেলে যাচ্ছেন আঁস্তাকুড়ে। এমন সব নানা ঘটনা ঘটছে। তখন সেই শিশুটি অনাদরে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আবার কেউ কেউ মারা যাচ্ছে। এটাই ঠেকাতে পালনা প্রকল্প চালু করা হয়েছে। বিয়ের আগে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে এই কাজ করছেন অনেক মহিলা। এমন সব তথ্য হাতে পেয়েছে জেলা প্রশাসন। এই গোটা বিষয়ে জেলাশাসক বলেন, ‘আর যাতে এমন ঘটনা না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। এমন প্রকল্প নিয়ে আসায় অনেকটা ঠেকানো যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে।’