মাতৃত্বকালীন ছুটি কি স্থায়ী–অস্থায়ী কর্মীদের মধ্যে পার্থক্য থাকে? এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল বাংলায়। তবে এবার তা নিয়ে বড় পর্যবেক্ষণ শোনাল কলকাতা হাইকোর্ট। কর্মী স্থায়ী হোক বা অস্থায়ী মাতৃত্বকালীন ছুটিতে ফারাক করা যায় না বলে জানিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বরং স্থায়ী–অস্থায়ী উভয়ই সমান সংখ্যক মাতৃত্বকালীন ছুটি পাওয়ার যোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এক মামলার প্রেক্ষিতে এমনই মন্তব্য করল কলকাতা হাইকোর্ট। স্থায়ী–অস্থায়ী কর্মী নিরিখে মাতৃত্বকালীন ছুটির ক্ষেত্রে সেটা শর্ত হতে পারে না বলেই জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
এদিকে মাতৃত্বকালীন ছুটি সংক্রান্ত একটি মামলা চলছিল কলকাতা হাইকোর্টে। তার প্রেক্ষিতেই শুনানিতে বিচারপতি স্থায়ী–অস্থায়ী কর্মীর মধ্যে ফারাকের বিষয়টি খারিজ করে দেন। আর জানান, এমন ফারাক করা হলে সেটা হবে কর্মীর নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়া। এই ফারাকের বিষয়টি মিটে যেতেই জয়ের হাসি হাসেন ওই কর্মী। তবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার এই চুক্তিভিত্তিক কর্মীর মাতৃত্বকালীন ছুটিতে অনুমতি দিয়ে আদাালত তার এই পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। এই মামলায় দীর্ঘ শুনানি হয়। এই মামলায় রায় দিতে গিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজা বসু চৌধুরী বলেন, ‘মাতৃত্বকালীন ছুটির বিষয়ে দু’ধরনের কর্মীর মধ্যে এই পার্থক্য মেনে নেওয়া যায় না। এটা যদি মেনে নেওয়া হয় তাহলে সামাজিক ন্যায় বিচারের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হবে।’
আরও পড়ুন: ‘এটা বাপ কা পয়সা নয় বরং পাপ কা পয়সা’, নির্মলাকে তুলোধনা করলেন অভিষেক
অন্যদিকে আদালত সূত্রে খবর, ২০১১ সালে অস্থায়ী কর্মী হিসাবে চাকরিতে যোগ দেন নীতা কুমারী। তারপর কয়েকবছর পর ওই যুবতী বধূ অন্তঃসত্ত্বা হন। আর ১৮০ দিন মাতৃত্বকালীন ছুটির জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সরাসরি জানিয়ে দেয়, যেহেতু তিনি অস্থায়ী কর্মী তাই তাঁকে ১৮০ দিনের ছুটি দেওয়া যাবে না। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এই বক্তব্য শুনে তিনি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। তাঁর দুই আইনজীবী রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গাইডলাইন তুলে ধরে বলেন, গাইডলাইন অনুযায়ী তাঁদের মক্কেলের ছুটি পাওয়ার অধিকার আছে। আর মাতৃত্বকালীন ছুটির ক্ষেত্রে দুই মহিলার সমান অধিকার রয়েছে। যদি একজনকে বঞ্চনা করা হয়, তবে সেটা সমাজের ক্ষেত্রে বৈষম্যের উদাহরণ তৈরি করবে।
এই পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়ে যায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। তখন ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে আইনজীবী কলকাতা হাইকোর্টে জানান, তিনি অন্যভাবে ছুটি নিতে পারতেন। কিন্তু বিষয়টি আদালত হালকাভাকে মেনে নিতে নারাজ। বিচারপতির কথায়, চুক্তির চাকরিতে মেডিক্যাল লিভ–সহ অন্য ছুটি থাকলে মাতৃত্বকালীন ছুটিও দিতে হবে। এটা না দিলে একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়। মাতৃত্বকালীন ছুটির সুযোগ বিশ্বজনীন। এই সুযোগ থেকে অস্থায়ী কমীকে বঞ্চিত করার অর্থ, তাঁকে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করা। এমন ঘটলে কর্মরত মহিলাদের মধ্যে একটি শ্রেণি প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। এটা দেশের ভবিষ্যতের পক্ষে ক্ষতিকর।