তৃণমূল কংগ্রেস নেতা শেখ শাহজাহানের প্রতি তাঁর কোনও সমবেদনা নেই। জানিয়ে দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। তিনি সরাসরি শাহজাহানের নাম না করলেও ইঙ্গিতটা যে সন্দেশখালির ‘বাঘের’ দিকেই ছিল, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই আইনজীবী মহলের। তারইমধ্যে শাহজাহানের আইনজীবী সব্যসাচী বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যেও একাধিক মন্তব্য করেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। শাহজাহানের আইনজীবীকে প্রাথমিকভাবে দেখেই হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বলে ওঠেন, তাঁর জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। সেইসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন যে আগামী ১০ বছর শাহজাহানের আইনজীবীকে অত্যন্ত ব্যস্ত থাকতে হবে। শাহজাহানের (শাহজাহান নাম করেননি, মক্কেল বলেন) অনেক কাজ করতে হবে আইনজীবীকে। সেজন্য চার-পাঁচজন জুনিয়র আইনজীবীকেও তাঁর সঙ্গে রাখতে হবে জানান হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি।
বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি যখন সেই মন্তব্য করেন, সেটার কয়েক ঘণ্টা আগেই শাহজাহানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত রাতে উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁর বামনপুকুর থেকে তাঁকে ধরা হয়েছে বলে দাবি করেছে রাজ্য পুলিশ। অর্থাৎ ৫৫ দিন ‘নিখোঁজ’ থাকার পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সূত্রের খবর, মিনাখাঁ থানায় তাঁকে জেরা করা হয়। সেইসময় ইডি আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনায় নিজের দোষ কবুল করে নিয়েছেন সন্দেশখালির ‘বাঘ’। সেটার ভিত্তিতেই তাঁকে বসিরহাট মহকুমা আদালতে পেশ করা হয়। ১৪ দিনের জন্য হেফাজতে নেওয়ার জন্য আবেদন জানায় পুলিশ। শেষপর্যন্ত শাহজাহানকে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছেন বসিরহাট মহকুমা আদালতের বিচারক।
আর সেইসবের মধ্যেই শাহজাহানের গ্রেফতারির ‘কৃতিত্ব’ কার, তা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। যে দলের নেতার বিরুদ্ধে ইডি আধিকারিকদের উপর হামলা, ধর্ষণ, যৌন নির্যাতনের মতো অভিযোগ উঠেছে। যদিও শাহজাহানের গ্রেফতারির পরে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা শাসক দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ দাবি করেছেন, আদালতের বাধা থাকায় পুলিশ এতদিন গ্রেফতার করতে পারেনি শাহজাহানকে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কারণে সেই বাধা তুলে নিয়েছে হাইকোর্ট। তারপরই শাহজাহানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
অন্যদিকে বিজেপির দাবি, গেরুয়া শিবিরের লাগাতার আন্দোলনের জন্যই শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়েছে রাজ্য পুলিশ। রাজ্য সরকার মানতে রাজি ছিল না যে সন্দেশখালিতে কোনও অত্যাচারের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু লাগাতার আন্দোলনের মাধ্যমে রাজ্য সরকারকে মানতে বাধ্য করা হয়েছে যে সন্দেশখালিতে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। তার জেরেই শাহজাহানকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে বিজেপি। আর সিপিআইএমের দাবি, মানুষের আন্দোলনের জয় হয়েছে। তাঁদের চাপেই শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ।