জয়দীপ ঠাকুর
করোনা পরিস্থিতি একদিকে যখন দিন দিন ঘোরালো হয়ে উঠছে তখন হাসপাতালগুলিকে পুরনো ছন্দে ফেরার জন্য ব্লু প্রিন্ট তৈরি করতে বলল রাজ্য সরকার। স্বাস্থ্য ভবন থেকে এই মর্মে হাসপাতালগুলির কর্তাদের কাছে নির্দেশিকা পৌঁছেছে। সূত্রের খবর, হাসপাতালগুলিকে করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে এবার থেকে অস্ত্রোপচারের জন্য ভর্তি হওয়া সমস্ত রোগীর আগে Covid-19 পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হতে চলেছে। সেই পরীক্ষার ফল নেগেটিভ হলে তবেই হবে অস্ত্রোপচার।
করোনা রোগীর বাড়বাড়ন্তে লন্ডভন্ড অবস্থা পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ মেডিক্যাল কলেজ ও সরকারি হাসপাতালের। করোনা রোগীর চাপে হাসপাতালে তলানিতে ঠেকেছে অন্যান্য রোগীর সংখ্যা। তার ওপর রয়েছে সংক্রমণের ভয়। রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে করোনা ছড়ানোর খবর মিলেছে। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালগুলির পরিষেবা স্বাভাবিক করার ব্লু প্রিন্ট তৈরি করতে মেডিক্যাল কলেজের সুপার ও মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার।
সরকারি সূত্রের খবর, লকডাউন কবে উঠবে কেউ জানে না। ফলে অন্যান্য রোগীদের দীর্ঘদিন চিকিৎসায় বঞ্চিত রাখা অনুচিত হবে। তাই হাসপাতালগুলির পরিষেবা স্বাভাবিক করতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার।
বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনা চিকিৎসা শুরুর আগে সেখানে দিকে কুকুরের কামড়-সহ বিভিন্ন রোগের প্রায় ১৫০ জন রোগী আসতেন। সেখানে এখন জোর ১০-১৫ জন আসেন।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস জানিয়েছেন, ‘আগে আমাদের হাসপাতালে আউটডোরে প্রতিদিন ৫,০০০ রোগী আসতেন। সেখানে এখন মেরে কেটে ৬০০ জন আসেন। লকডাউনের আগে হাসপাতালে রোজ ১,৫০০ – ২,০০০ রোগী ভর্তি থাকতেন। এখন ২৫০ জন মতো রয়েছেন।’
কিন্তু হাসপাতালকে পুরনো ছন্দে ফেরানোর ব্লু প্রিন্ট ঠিক কী? স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, ‘অস্ত্রোপচারের জন্য সরকারি হাসপাতালে ভর্তির আগে করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হবে। যদি রিপোর্ট পজিটিভ আসে তাহলে অস্ত্রোপচার পিছানো হবে। আর যদি জরুরি অস্ত্রোপচার হয় তাহলে চিকিৎসকরা উপযুক্ত বিধিনিষেধ মেনে তা করবেন।’
রাজ্যে ইতিমধ্যে করোনায় ২ প্রবীণ চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া অসংখ্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত। করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসায় কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন তার থেকেও বেশি।
রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম ফর ডক্টরস। সংগঠনের তরফে ডাক্তার এস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘সরকারের এই পদক্ষেপকে আমরা স্বাগত জানাই। উপসর্গ নেই এমন ব্যক্তিরও করোনা পরীক্ষা করানো দরকার। প্রচুর চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী হয় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, নয় কোয়ারেন্টাইনে গিয়েছেন। সরকার তো এখনো তার সংখ্যাও জানায়নি।’