বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেসকে একসারিতে বসিয়ে আক্রমণ শানিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন প্রশ্ন উঠছে কেন? বছর ঘুরলেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন।রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, সেখানে দু’রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের ক্ষমতায় এসে হ্যাটট্রিক করতে পারেন। দুই, রাজ্যে পালাবদল ঘটে বিজেপি ক্ষমতায় আসতে পারে। এখন কোনটা ঘটবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে একটা অলিখিত বিরোধী জোট দেখা যাচ্ছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। আর তাই এই 'কৌশল'-এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন তিনি।
একটু পিছনের দিকে হাঁটলেই দেখা যাবে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি যে ভোট পেয়েছিল তার বেশিরভাগটাই এসেছিল সিপিএমের ভোটব্যাঙ্ক থেকে। তাই দুই থেকে ১৮ আসনে পৌঁছেছিল বিজেপি। আর এটা করতে গিয়ে রাজনৈতিক অস্তিত্ব সংকটে পড়ে সিপিএম–সহ গোটা বামফ্রন্ট। এবার বিধানসভা নির্বাচনে যাতে এই ভোট–ট্রান্সফার থেকে সতর্ক হওয়া যায়, তাই প্রথম থেকেই আগ্রাসী মনোভাব নিচ্ছেন মমতা। যার জন্য তিনি বলেন, ‘সিপিএম নামে একটি রাজনৈতিক দল, যারা কঙ্কাল কাণ্ডের সবচেয়ে বড় নায়ক। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, নেতাই, কেশপুর করেছে। আজ তারা বিজেপি’র সবচেয়ে বড় রক্ষক। সিপিএম হল বিজেপি’র রক্ষক, বিজেপি ভক্ষক। আর কংগ্রেসের কথা কী বলব, ওরা সাপের গালেও চুমু খায় আবার ব্যাঙের গালে চুমু খায়। ওরা হল তক্ষক!’
মমতার এই মন্তব্যের পর অবশ্য সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘একেই বলে চোরের মায়ের বড় গলা। বাংলায় বিজেপিকে হাত ধরে এনে, যিনি এনেছেন তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি’র সঙ্গে বারবার ঘর করেছেন। এখনও নানা কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দিতে গোপন বোঝাপড়া চালাচ্ছেন। মানুষকে বোকা বানানোর জন্য নকল যুদ্ধ করছেন। আর সিপিএম খারাপ আর বাকি বামেরা ভাল এই স্লোগান তুলে ২০১১ সালে ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিষেণজি’র মতো ওকে যাঁরা মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চেয়েছিলেন তাঁদের কী পরিণতি হয়েছে তা সকলের জানা। এখন মাওবাদী ছত্রধর মাহাতোরা ওঁর দলের সম্পদ হয়েছেন।’
সিপিএমের এই বক্তব্য বিজেপিরও। আর এই রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে বামেরা জোট করে লড়ছে। তাই বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কঙ্কা–বঙ্কা–শঙ্কার আশঙ্কা অমূলক নয় বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। এই আশঙ্কা থেকেই বিরোধী জোটের ভোট যাতে এক জায়গায় না আসে অর্থাৎ তা আটকাতেও সওয়াল করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘সিপিএমের হার্মাদরা আজ বিজেপি’র তল্পিবাহক। তাদের দিয়ে বিজেপি সারা রাজ্যে অশান্তি করার ছক করেছে। বিজেপি এই দুই দলের সাহায্যে বহিরাগতদের দিয়ে টাকা বিলি করছে। ব্লকে ব্লকে বহিরাগতদের উপর কড়া নজর রাখতে হবে। তৃণমূল এখন বটবৃক্ষ। এখানে খাবলাবার জায়গা নেই। বিজেপি— তোমার অনেক টাকা, অনেক গুন্ডা কিন্তু তৃণমূলকে তুমি কিনতে পারবে না, চ্যালেঞ্জ রইল।’