ফের গাড়ি নিয়ে যাত্রাপথে আঘাত পেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার বিকেলে বর্ধমান থেকে কলকাতা ফেরার সময় জিটি রোডে ওঠার সময় একটি দ্রুতগামী গাড়িকে দেখে জোরে ব্রেক কষেন মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ির চালক। যার ফলে কপালে চোট পান সামনের আসনে বসে থাকা মমতা। কিন্তু সিট বেল্ট পরা থাকলে কী করে সামান্য ব্রেক কষায় মুখ্যমন্ত্রী মাথায় আঘাত পেলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন গাড়ির সুরক্ষা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীর দাবি সত্যি হলে আধ কোটি টাকা দামের গাড়ির সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েই প্রশ্ন উঠে যাবে।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বুধবার বিকেলে আবহাওয়া খারাপ থাকায় হেলিকপ্টার ছেড়ে বর্ধমান থেকে গাড়িতে করে কলকাতা ফেরেন তিনি। সভাস্থল থেকে কিছু দূরে জিটি রোডে ওঠার সময় ‘২০০ স্পিডে’ একটা গাড়ি তাঁর গাড়ির সামনে দিয়ে চলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে জোরে ব্রেক কষেন মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ির চালক। তাতে ‘কংকারশন’ হয়ে কপালে আঘাত লেগেছে তাঁর। এমনকী রক্তও বেরিয়েছে। সন্ধ্যায় রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে রাজভবন থেকে বেরিয়ে মমতা বলেন, ‘এখনও যন্ত্রণা করছে। মরেও যেতে পারতাম।’
মমতার বয়ানে আধ কোটি টাকা দামের তয়োতা ফরচুনার গাড়ির যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা দামের এই গাড়িকেই ভরসা করেন দেশের তাবড় রাজনীতিক থেকে ব্যবসায়ী ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা। যাত্রী সুরক্ষা ও আরামদায়ক যাত্রার দিক থেকে এই গাড়ির জুড়ি মেলা ভার বলে মত বিশেষজ্ঞদের। সেই গাড়ি একটা ব্রেক কষতেই কী ভাবে সামনের আসনে বসে থাকা যাত্রী কী ভাবে চোট পেলেন তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘সিট বেল্ট পরে থাকলে কোনও অবস্থাতেই সামনের আসনের যাত্রী বা চালকের মাথা কোথাও ঠুকে যাওয়ার কথা নয়। আর সেই পরিস্থিতি তৈরি হলে তার আগেই খুলে যাবে এয়ারব্যাগ। এমনকী জানলার কাচেও রয়েছে SRS নামে বিশেষ প্রযুক্তি। যাতে পাশ থেকে আঘাত এলেও যাত্রীকে আহত হওয়া থেকে বাঁচানো যেতে পারে।’ তাঁরা জানাচ্ছেন, যাত্রী সুরক্ষায় ফাইভ স্টার রেটিং প্রাপ্ত ওই গাড়ি। গাড়ির ভিতরে যাত্রীর সুরক্ষা পরীক্ষাকারী সংস্থা গ্লোবাল এনসিএপি এই গাড়িতে যাত্রী সুরক্ষায় ৩৬ এর মধ্যে ৩৪.০৩ নম্বর দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে এই দুর্ঘটনা তখনই ঘটতে পারে যদি মুখ্যমন্ত্রী সিট বেল্ট পরে না থাকেন। দুর্ঘটনার ঠিক পরের যে ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে তাতেও সিট বেল্ট পরা অবস্থায় দেখা যায়নি মমতাকে।
বলে রাখি, এর আগে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারের সময় নন্দীগ্রামে গাড়ির ফুটবোর্ডে দাঁড়িয়ে জনতার অভিবাদন গ্রহণ করার সময় পায়ে চোট পান মমতা। সেই চোট আজও ভোগাচ্ছে তাঁকে। মুখ্যমন্ত্রীকে যাঁরা কাছ থেকে চেনেন তাঁরা বলছেন, মানুষ যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভালোবাসে মুখ্যমন্ত্রীও তাদের ভালোবাসেন ততোধিক। তাই অন্যান্য সময় নিজের সুরক্ষা নিয়ে সচেতন থাকলেও জনতার মাঝে পড়লে তৃণমূলনেত্রীর ওসব খেয়াল আর থাকে না। যার ফলে বারবার জনতার মাঝেই আহত হন তিনি।