কয়লা, গরু পাচার বা শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে বিগত কয়েক বছর ধরেই উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি। একাধিক ক্ষেত্রেই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন শাসকদলের নেতা অথবা বাংলার 'প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বরা'। এই আবহে এবার আনন্দবাজার পত্রিকার এক রিপোর্টে দাবি করা হল, এহেন এক 'প্রভাবশালী' দুর্নীতির টাকা বিদেশে পাচার করেছেন নিজের রুশ বান্ধবীর কাছে। ইডি সূত্রে সেই খবর মিলেছে বলে দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ইডির তদন্তকারীদের অভিযোগ, লন্ডন নিবাসী সেই রুশ নাগরিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাচার করা হয়েছে দুর্নীতির টাকা। যদিও এই প্রভাবশালীর নাম প্রকাশ্যে আসেনি।
রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ইডির তদন্তকারীরা বলছেন, উক্ত প্রভাবশালী নেতার বান্ধবীর জন্ম প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়েনের একটি দেশে। তবে বর্তমানে তিনি রুশ নাগরিক। সেই বান্ধবী পেশায় মডেল। থাকেন লন্ডনে। সেই মহিলার অ্যাকাউন্টে দুর্নীতির টাকা যাওয়ার তথ্য প্রমাণ হাতে এসেছে তদন্তকারীদের। দাবি করা হচ্ছে, পশ্চিম এশিয়ার এক দেশে হাওয়ালার মাধ্যমে পাচার করা হয়েছিল দুর্নীতির টাকা। ভুয়ো সংস্থার নামে সেখানে সেই টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল। সেই সংস্থার অ্যাকাউন্টের নথি খতিয়ে দেখেই লন্ডন নিবাসী রুশ মডেলের বিষয়টি জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। দেখা গিয়েছে, ভুয়ো সংস্থার অ্যাকাউন্ট থেকে সেই প্রভাবশালীর রুশ বান্ধবীর অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়েছে।
এর আগে এক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, রাজ্যের একাধিক প্রভাবশালী নেতা ২২ বার পর্যন্ত বিদেশ ভ্রমণ করেছেন এক এক বছরে। ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যকার সময়ের তথ্য থেকে এটা জানতে পেরেছে ইডি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বার দুবাইতে ভ্রমণ করেন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এই আবহে কেন এতবার বিদেশে যেতে হচ্ছে প্রভাবশালীদের, এই নিয়ে তদন্ত শুরু করছে ইডি। ইডির নজরে থাকা প্রভাবশালীরা কে? ইডি সূত্রে সরাসরি কারও নাম প্রকাশ করা হয়নি। তবে জানা গিয়েছে, এক সাংসদ, তাঁর হিসাবরক্ষক ও তাঁদের দু’জনের পরিবারের সদস্যদের বিদেশ ভ্রমণের বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
প্রভাবশালীদের বিদেশ যাত্রার অধিকাংশ টিকিট কাটা হয়েছে মধ্য কলকাতার একটি ভ্রমণ সংস্থার মাধ্যমে। সেই সংস্থার অফিসে সম্প্রতি অভিযান চালিয়েছে ইডি। সেখান থেকে বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এদিকে সেই ভ্রমণ সংস্থার দুই অংশীদারকে দিল্লিতে তলব করে জেরা করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, কয়লা পাচারের তদন্তে নেমে ইডি দাবি করেছে, ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কয়েক হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছিল। বিদেশের সংস্থায় বিনিয়োগ করা হয়েছে সেই টাকা। আবার ঘুর পথে তা দেশে ফিরিয়ে নিয়ে এসে কেনা হয়েছে সম্পত্তি। ইডি জানিয়েছে, জেরায় অনুপ মাঁঝি তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, পাচারকারীদের সঙ্গে প্রভাশালী নেতাদের যোগসূত্র ছিলেন বিনয় মিশ্র। তিনি পাচারের টাকা প্রভাবশালীদের আত্মীয়র নামে বিদেশে পাচারের ব্যবস্থাও করতেন।