লকডাউনেই লঙ্কা এবং ধনেপাতা কিনতে বেরিয়েছিলেন সালকিয়া জেলিয়াপাড়া লেনের শ্যামল দেব। নিশ্চয়ই খুব দরকার! যদিও প্রৌঢ় নিজেই জানালেন, তেমন দরকার ছিল না। বাইরে বেরনোর ফিকির আর কী!
বছর ৫৪-র হাওড়াবাসী শুধু একা নন, লকডাউনের প্রথম দিনে বাড়িতে ‘মন টিকতে চায় না’ ব্রিগেডের অনেক সদস্যেরই দেখা মিলল কলকাতা ও হাওড়ায়। কোথাও পুরনো (তিন বছরের পুরনোও ছিল) প্রেসক্রিপশন নিয়েই ‘অত্যন্ত প্রয়োজনীয়’ ওষুধ কিনতে বেরিয়েছেন। কোথাও আবার মাস্ক ছাড়াই দিব্য খোশমেজাজে গল্প করার ছবি ধরার পড়েছে। কেউ কেউ ব্যারিকেডের ফাঁক গলেই ‘অভিযান’-এ বেরোলেন। কাঁকুড়গাছি, ফুলবাগানের মতো জায়গায় অনেককেই মাস্ক ছাড়া ঘুরতে দেখা গিয়েছে। তাঁদের দেখে মনে হচ্ছিল, ‘সব ঠিক আছে। গায়েব করোনা।’
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অবশ্য সে কথা বলছে না। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত শুধু কলকাতায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮,৭৪২। আগের ২৪ ঘণ্টায় নয়া ৩৭৪ জন আক্রান্তের হদিশ মিলেছে। ৫,২০৫ জন রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও মৃত্যু হয়েছে ৪৭০। একই অবস্থা হাওড়ার। সেখানে শেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৩০ জন আক্রান্তের হদিশ মিলেছে। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩,৬৯৫। মৃত্যু হয়েছে ১৪১ জনের। তাতে অবশ্য ভ্রূক্ষেপ নেই ‘সাহসী’ লোকজনদের।
পুলিশ-প্রশাসনের তরফে অবশ্য কড়া লকডাউনের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দমদম, বাঙুরের মতো কয়েকটি জায়গায় ব্যারিকেড না থাকলেও মোটের উপর অধিকাংশ জায়গায় পুলিশের নজরদারি ছিল। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কয়েকটি কনটেনমেন্ট জোনে যান কলকাতা পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। এক শীর্ষ পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘ব্যারিকেড গলে বাইরে যাওয়া এবং ভিতরে আসার ক্ষেত্রে অনেককেই আটকেছি আমরা। কারোর যদি কিছু দরকার হয়, তাহলে স্থানীয় পুলিশের হেল্পলাইনে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে। বাড়িতে থাকার আর্জি জানিয়ে ঘোষণাও করা হচ্ছে। যাঁরা মাস্ক ছাড়া বাইরে আসছেন, তাঁদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
তা সত্ত্বেও অনেকের মধ্যেই সচেতনতার কোনও বালাই নেই। ভবানীপুরের চক্রবেড়িয়ার বাসিন্দা কাকলি সেন বলেন, ‘রোগ ছড়ানোয় এরকম লকডাউনকে স্বাগত। কিন্তু আমজনতা যদি বিধি মেনে না চলে, তাহলে পুলিশ এবং প্রশাসন কিছু করতে পারবে না। ওঁদের আরও সচেতন হতে হবে।’
সেটা কবে? প্রায় চার মাস আগে প্রথম লকডাউন দেখে ফেলা কলকাতা এবং হাওড়াবাসী এখনও সেই উত্তর হাতড়ে বেড়াচ্ছেন।