রেশন বন্টন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। মন্ত্রী গ্রেফতার হওয়ার পরেই তাঁর সম্পত্তি নিয়ে বিভিন্ন মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সম্পত্তি গত ১০ বছরে কয়েক গুণ বেড়েছে। শুধু মন্ত্রীর সম্পত্তিই বাড়েনি, মন্ত্রীর স্ত্রীর সম্পত্তিও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরও পড়ুন: স্থিতিশীল জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, কোর্টে অসুস্থতার পর হাসপাতালের রিপোর্ট কী বলছে?
২০১১ সালে ভোটের সময় জ্যোতিপ্রিয় নির্বাচনী হলফনামা জমা দিয়েছিলেন। হলফনামা অনুযায়ী, সেই সময় তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৭১ লক্ষ ১১ হাজার ৫১৪ টাকা। তবে ২০২১ সালের নির্বাচনে তিনি কমিশনকে যে হলফনামা দিয়েছিলেন তাতে তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁর স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ হল ৩ কোটি ৯৩ লক্ষ ৯৪ হাজার অর্থাৎ জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সম্পত্তির পরিমাণ গত ১০ বছরে প্রায় সাড়ে ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও ২০১৬ সালের নির্বাচনে জ্যোতিপ্রিয় নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছিলেন, তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ কমে ৬২ লক্ষ ২২ হাজার ৫৪৮ টাকা ছিল। অন্যদিকে, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের স্ত্রীর সম্পত্তির পরিমাণ গত ১০ বছরে ২৬ গুণ বেড়েছে। শতাংশের হিসেবে সেই বৃদ্ধির পরিমাণ হল ২৫০২ শতাংশ।
হলফনামা অনুযায়ী, ২০১১ সালে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের স্ত্রীর সম্পত্তি ছিল ৯ লক্ষ ১৪ হাজার ৯৩০ টাকা। কিন্তু, ২০২১ সালে দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী সেই সম্পত্তি বেড়ে হয়েছে ২ কোটি ৩৮ লক্ষ ৯ হাজার ৭০৮ টাকা। আয়ের উৎস হিসাবে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালু জানিয়েছিলেন, তাঁর পেশা ওকালতি। বেতনই হল তাঁর আয়ের উৎস। অন্যদিকে, তাঁর স্ত্রীর আয়ের কোনও উৎস নেই। তিনি একজন গৃহিনী। এই অবস্থায় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের স্ত্রীর সম্পত্তি কীভাবে বাড়ল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
২০২১ সালে নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, সেই সময় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ১৫ টি সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছিল। যার মধ্যে রেকারিং ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট ছিল ২টি। এছাড়া, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ায় জ্যোতিপ্রিয়র নামে ১২টি ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে। পাশাপাশি ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ায় ২টি এবং একটি সমবায় ব্যাঙ্কে ২০টি ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে। হলফনামা থেকে আরও জানা গিয়েছে, ৩টি জীবনবীমাও রয়েছে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের। পোস্ট অফিসে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা জমা রয়েছে। এছাড়া ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার সোনার গয়না রয়েছে তাঁর কাছে।
অন্যদিকে, হলফনামায় জ্যোতিপ্রিয় বলেছেন, তাঁর স্ত্রীর ৪টি সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে। ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে ৮টি ব্যাঙ্কে। তাঁর স্ত্রীর নামে রয়েছে ৬টি জীবন বীমা। এছাড়া পোস্ট অফিসে টাকা জমা রয়েছে তাঁর স্ত্রীর কাছে। তাঁর ৪ লক্ষ ২৪ হাজার ৩১০ টাকার গয়না আছে। তাদের দুজনের শেয়ারবাজারে বন্ড কেনা রয়েছে বলেও হলফনামায় দাবি করেছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
এছাড়া, জ্যোতিপ্রিয় এবং তাঁর স্ত্রীর আলাদা গাড়ি রয়েছে। যার মধ্যে একটি রয়েছে স্কোরপিও এস ১১। সেটি ২০১৯ সালে তিনি কিনেছিলেন। যার দাম পড়েছিল ১১ লক্ষ ৮৬ হাজার ২৩ টাকা। তাঁর একটি পুরনো স্করপিও গাড়ি ছিল। সেটি বিক্রি করে তিনি ওই গাড়িটি কিনেছিলেন। তাঁর স্ত্রীর মারুতি সুইফট ডিজায়ার গাড়ি আছে। ২০১৬ সালে গাড়িটি কেনা হয়েছিল ৬ লক্ষ ৮৫ হাজার ৫২৭ টাকায়।
প্রসঙ্গত, রেশন দুর্নীতিতে ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানকে গ্রেফতার করেছিল ইডি। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারে তদন্তকারী সংস্থা। তারপরে বৃহস্পতিবার জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়িতে ২০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তল্লাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে গ্রেফতার করে ইডি।