এবার চেনা ছকের বাইরে খেললেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতিকে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করলেন রাজ্যপাল। আর তাতেই জোর চর্চা শুরু হয়ে গেল। কর্ণাটক হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত ওই বিচারপতির নাম শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়। উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে নবান্ন–রাজভবন সংঘাত অনেকদিন ধরেই চলছিল। কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের পর প্রকাশ্যে সংঘাত থেমেছে। তারপরই রাজ্যপাল নিজের সাহস দেখালেন এভাবেই। তাতে শিক্ষা জগতের মানুষজন চমকে উঠলেও এখন এটাই বড় খবর।
রাজ্যপালের এই সিদ্ধান্তে রাজ্য সরকার খুশি হবে না এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আদালতের রায়কে তো মান্যতা দিতেই হবে। কলকাতা হাইকোর্টের রায় ছিল, অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্যপালের সিদ্ধান্ত বৈধ। আর এই উপাচার্যদের বেতন–সহ অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। তারপরই রাজ্যপালের এমন চেনা ছকের বাইরে খেলা রাজ্য সরকারের কাছে খুশির হাওয়া বয়ে আনবে না সেটাই দস্তুর। পদাধিকার বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাজ্যপালই। তবে রাজ্য সরকারের সুপারিশ মেনেই উপাচার্যদের নিয়োগ করেন তিনি। কিন্তু এবার উল্টো পথে হাঁটলেন সিভি আনন্দ বোস। সম্প্রতি রাজ্যের ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করেন আচার্য তথা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।
এদিকে রবীন্দ্রভারতীর বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য করা হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত এই বিচারপতিকে। তার সঙ্গে শান্তি ও সম্প্রীতি কমিটির চেয়ারম্যানও তিনিই। এই পদক্ষেপে রাজভবন বনাম রাজ্য সরকারের দ্বন্দ্ব আরও বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আগে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য ছিলেন নির্মাল্যনারায়ণ চক্রবর্তী। তাঁর মেয়াদ ফুরিয়েছে। তারপর প্রায় দু’মাস উপাচার্যহীন ছিল রবীন্দ্রভারতী। এবার নির্মাল্যের মেয়াদ শেষ হতেই প্রাক্তন বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায় হলেন রবীন্দ্রভারতীর নতুন অস্থায়ী উপাচার্য। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন নিয়ে পাশ করেছিলেন। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিও ছিলেন। তারপর কর্ণাটক হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং অবশেষে অবসর।
আরও পড়ুন: ‘আদিবাসী–বিরোধী প্রবণতার জন্য বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করুন’, আক্রমণ বীরবাহার
ঠিক কী বলছে তৃণমূল কংগ্রেস? বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিয়ম, অস্থায়ী উপাচার্য পদে বসতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির একটি নির্দিষ্ট সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সেই নিয়ম এক্ষেত্রে মানা হল না। এই বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন বলেন,‘এক্তিয়ার বর্হিভূত, সংবিধান বহির্ভূত কাজ করেছেন রাজ্যপাল। রাজ্যে একটা নির্বাচিত সরকার এবং দক্ষ শিক্ষা দফতর আছে। সেখানে কারও সঙ্গে আলোচনা না করে একতরফাভাবে এই তুঘলকি সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন রাজ্যপাল। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয়। রাজ্য়পাল সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর চেষ্টা করছেন।’ স্বাধীনতার পর বাংলায় আর এমন একটি ঘটনারই নজির আছে। ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৬৮ পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য করা হয়েছিল এলাহাবাদ হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বিধূভূষণ মালিককে।