প্রখ্য়াত অর্থনীতিবিদ তথা নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের সঙ্গে কিছুদিন আগেও নানা কারণে বিশ্বভারতীর দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল। এমনকী বিশ্বভারতীর তরফে এনিয়ে একাধিকবার নোটিশও পাঠানো হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেসব দ্বন্দ্ব আজ অতীত। বিশ্বভারতীয় স্মারক বক্তব্যে শামিল হলেন অমর্ত্য সেন।
তিনি অবশ্য় ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন। আর অন্যদিকে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অপর অর্থনীতিবিদ প্রভাত পট্টনায়ক। বিশ্বভারতীর অর্থনীতি ও রাজনীতি বিভাগের উদ্যোগে এই স্মারক বক্তব্যের আয়োজন করা হয়েছিল। দ্বিতীয় অশোক রুদ্র স্মারক বক্ত্ৃতা। সেখানে অমর্ত্য সেনের পাশাপাশি অপর অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক প্রভাত পট্টনায়ক উপস্থিত ছিলেন। তিনি জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক।
নব্য উদারনৈতিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অধীনে কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য শীর্ষক বিষয়ে বক্তব্য রেখেছেন প্রভাত পট্টনায়ক। তাঁর সুচিন্তিত মতামতকে স্বাগত জানান বিশ্বভারতীর ছাত্র ছাত্রী ও অভিভাবকরা।
বিগতদিনে বিশ্বভারতীর উপাচার্য ছিলেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। কিন্তু তাঁর সময়ে বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সঙ্গে অমর্ত্য সেনের সংঘাত একেবারে চরমে ওঠে। তিনি সরাসরি অর্থনীতিবিদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলতেন। এমনকী শান্তিনিকেতনের প্রতীচী বাড়ির ১৩ ডেসিমাল জমি খালি করার জন্য নোটিশও গিয়েছিল। এনিয়ে বিভিন্ন মহলে শোরগোল পড়ে যায়। কিন্তু তাতেও দমেননি তৎকালীন উপাচার্য। বার বার তিনি অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন। কিন্তু এভাবে বিশ্বভারতীর মতো প্রতিষ্ঠানে থেকে নোবেলজয়ীর বিরুদ্ধে কথা বলা কতটা যুক্তিসংগত সেটা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।
তবে সম্প্রতি আদালতে সেই জমি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এরপরই বিশ্বভারতীর অনুষ্ঠানে অংশ নিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। এদিকে এর আগে জমি দখল সংক্রান্ত অভিযোগকে কেন্দ্র করে নানা চর্চা হয়েছিল।
গত ১৯ এপ্রিল নোটিস জারি করে বিশ্বভারতী অমর্ত্য সেনকে জানায় তিনি ১৩ ডেসিমাল জমি দখল করে রয়েছেন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সেই জমি তিনি যেন খালি করে দেন। নোটিসে বলা হয়েছিল ওই জমি বিশ্বভারতীর এবং তা দখল করে রাখা যাবে না। অমর্ত্য সেন বা তাঁর কোনও প্রতিনিধিকে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। কিন্তু তিনি বা তাঁর কোনও প্রতিনিধি না যাওয়ায় সেই নোটিস নোবেলজয়ীর বাড়ি প্রতীচীর গেটে টাঙিয়ে দেওয়া হয়।
তবে আদালতে স্বস্তি পেয়েছিলেন অমর্ত্য সেন। নোবেলজয়ীর বিরুদ্ধে বিশ্বভারতীর জমি দখল রাখার অভিযোগ করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাঁকে উচ্ছেদের নোটিসও দেওয়া হয়। বিষয়টি গড়ায় আদালত অবধি। আদালত বিশ্বভারতীর নোটিশ বাতিল করে দিয়েছে।
অমর্ত্য সেনের আইনজীবী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘আমরা জিতে গিয়েছি। অমর্ত্য সেনকে আর জায়গা ছাড়তে হবে না। বিচারকও এদিন উল্লেখ করেছেন, ওই নোটিসের কোনও ভিত্তি ছিল না।’