অসুখ আছে। তার চিকিৎসাও আছে। হাসপাতাল আছে। চিকিৎসক আছে। নেই বলতে শুধু হাসপাতালের বেড। আর তার জেরেই ঘুরে বেরিয়েও ভর্তি হওয়া হয় না রোগীর। কিন্তু চিকিৎসক যে বলেছিলেন, এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হতে। যদিও বেডের অভাবে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেননি ক্যানসার আক্রান্ত তরুণ রোগী। এই তরুণ রোগীর বক্তব্য অনুযায়ী, অসুস্থ শরীরে গাড়ি ভাড়া করে একমাসের মধ্যে ৬ বার এসেছিলেন এসএসকেএম হাসপাতালে। কিন্তু ভর্তি হতে পারেননি বলেই অভিযোগ। বারবারই তাঁকে পরে আসতে বলা হয়েছে। আর তাই হতাশ হয়ে ওই তরুণ ক্যানসার রোগী ফেসবুকে স্বেচ্ছামৃত্যুর ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। তারপর সপরিবারে ধরনায় বসেন উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে জেলাশাসকের দফতরে।
এই ঘটনা ঘটে বুধবার। আর আজ, বৃহস্পতিবার এই ঘটনা নিয়ে এলাকায় জোর চর্চা শুরু হয়েছে। এই তরুণের করুণ অবস্থার কথা জানতে পারেন স্থানীয় কাউন্সিলর। তখন তিনি এগিয়ে আসেন। আর ওই কাউন্সিলর নিজে উদ্যোগ নিয়েই নিউটাউনের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন ক্যানসার আক্রান্ত তরুণকে। এমনকী স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দিয়ে ভর্তি করেছেন ওই কাউন্সিলর। সুজাউদ্দিন মণ্ডল ক্যানসার আক্রান্ত তরুণ দেগঙ্গার বাসিন্দা। যেখানে সুজাউদ্দিন উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসকের কাছে ইমেল করে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি চেয়েছিলেন আজ তিনি চিকিৎসাধীন। এই ব্যবস্থা ও পরিষেবা পেয়ে খুশি সুজাউদ্দিনের পরিবার।
আরও পড়ুন: ‘এক বছর, এক প্রধানমন্ত্রী ফর্মুলা বানাচ্ছে ইন্ডিয়া জোট’, আশঙ্কা প্রকাশ প্রধানমন্ত্রীর
ঠিক কী লিখেছিলেন ক্যানসার আক্রান্ত তরুণ? বারবার ঘুরতে হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন সুজাউদ্দিন মণ্ডল। তাই চরম পথে হাঁটতে চেয়েছিলেন। তাই ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘বারবার ডেট দিয়েই চলেছে এসএসকেএম হাসপাতাল। ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। আমি খুব গরিব এবং অসহায়। চলাফেরার ক্ষমতা নেই। আর গাড়ি ভাড়া করে এসএসকেএম হাসপাতালে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। তাই আমার বিনীত অনুরোধ এই যে, নিজের ইচ্ছেয় আমাকে মৃত্যুর অনুমতি দেওয়া হোক।’ এই ফেসবুক পোস্টই নতুন পথ খুলে দেয়। হাড়ের ক্যানসারে আক্রান্ত হন ওই তরুণ। বারাসত পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।
আর কী জানা যাচ্ছে? এখানে সুজাউদ্দিন মণ্ডল আরও একজনের সাহায্য পান। তিনি হলেন, চিকিৎসক সুমিতকুমার সাহা। ওই চিকিৎসক বলেন, ‘জেলাশাসকের অফিসে একটা কাজে যাওযার সময় দেখতে পাই ধরনায় বসে আছেন ওই রোগী। কাগজপত্র দেখে গোটা বিষয়টি দেখে সবটা বুঝতে পারি। নিউটাউনের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আর স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে চিকিৎসা বিনামূল্যে হবে।’ ওরাল অঙ্কোসার্জেন সুমিতবাবু জানান, এক্ষেত্রে আগে অপারেশন হবে। তার পর শুরু হবে কেমোথেরাপি। সবাই এসএসকেএম হাসপাতালে গেলে ওখানে চাপ বাড়বেই। এবার আর চিকিৎসা পেতে অসুবিধা হবে না সুজাউদ্দিন মণ্ডলের।