শুরুটা করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আর তাঁর প্রত্যেকটির জবাব দিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তার পরই সোশ্যাল মিডিয়া যুদ্ধ থেকে সরে গেলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। ইডির প্রেস বিবৃতি নিয়ে শুরু হয় টুইট (এখন এক্স) যুদ্ধ। তারপর তা রাত পর্যন্ত গড়িয়ে যায়। মাঝের সময় চন্দ্রযান–৩ চাঁদের মাটি স্পর্শ করলে একটু থামে। তারপর আবার শুরু। সুতরাং এই যুযুধান প্রতিপক্ষের এমন লড়াইয়ে তেতে ওঠে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে রাজ্য–রাজনীতি।
এদিকে আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়তে থাকায় নারদার স্টিং অপারেশনের ছবি সামনে আনেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ছবি এবং অভিষেকের মন্তব্য দেখে নারদা নিয়েই আক্রমণে নামেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। শুভেন্দু পোস্ট করেন নারদা স্টিংয়ের ছবি। সেখানে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রথমসারির তিন নেতা—সৌগত রায়, ফিরহাদ হাকিম এবং কাকলি ঘোষদস্তিদারকে। আর শুভেন্দু লেখেন, ‘আপনি ফিরহাদ হাকিম, সৌগত রায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদারদের কেন জিজ্ঞেস করছেন না? ওঁরা হয়ত আপনার প্রশ্নের ভাল উত্তর দিতে পারবেন।’ এরপর শুভেন্দুর বক্তব্য, তাঁকে শুধু খবরের কাগজ হাতে দেখা যাচ্ছে ছবিতে। তখন আবার টুইট করেন অভিষেক। এবার একেবারে নারদার ভিডিয়ো পোস্ট করে দিলেন। যেখানে শুভেন্দুকে দেখা যাচ্ছে টাকা নিতে। আর সরাসরি ইডি এবং প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন, নারদায় এফআইআরে নাম থাকা প্রত্যেক অভিযুক্তর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।
অন্যদিকে উত্তাপ বাড়ছিলই। তার মধ্যেই রাতে অভিষেকের দ্বিতীয় টুইটকে রিটুইট করে শুভেন্দু লেখেন, ‘রুজিরা নারুলা কে? মেনকা গম্ভীরই বা কে? আপনি লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের ডিরেক্টর ছিলেন। এখন কারা সেই সংস্থার ডিরেক্টর পদে রয়েছেন সেটা কি সামনে আনবেন?’ জবাব দিতে দেরি করেননি অভিষেকও। তিনি পাল্টা লেখেন, ‘একজন ইডি–সিবিআই থেকে বাঁচতে নিজের বাবা–ভাইকেও দর কষাকষিতে নামিয়েছেন। তাঁর অন্যের আত্মীয়দের নিয়ে কথা বলা সাজে না। তাঁরা যেন কোন দলে রয়েছেন?’ অর্থাৎ শিশির–দিব্যেন্দুর প্রসঙ্গ উঠে আসে। এবার তর্কের পারদ চরমে ওঠে। আর শুভেন্দুর পাল্টা প্রশ্ন, ‘অর্জুন সিং, মুকুল রায়, কৃষ্ণ কল্যাণী, বিশ্বজিৎ দাস, তন্ময় ঘোষ, সুমন কাঞ্জিলালরা কোন দলে রয়েছেন?’ এঁরা বিজেপির টিকিটে নির্বাচনে জিতে পরে তৃণমূলে যোগ দেন।
আরও পড়ুন: বঙ্গে ফিরেই সক্রিয় অভিষেক, মুম্বইয়ের বৈঠক থেকে ফিরেই যাবেন ধূপগুড়িতে
এই মন্তব্য লিখে আসলে শুভেন্দু বিজেপিকেই খাটো করলেন। কারণ এই বিধায়করা জিতেও থাকলেন না বিজেপিতে। এটা দলের পক্ষে খারাপ বার্তা গেল। সেটা আবার ফলাও করে লেখায় ক্ষতি কার হল? উঠছে প্রশ্ন। তবে ততক্ষণে নানা তির্যক মন্তব্যে তপ্ত হয়ে উঠেছে নেটপাড়া। এবার শুভেন্দু পাল্টা আক্রমণ করে লেখেন, ‘মনে হয় আমার কড়া প্রশ্নের মুখে পড়ে কেউ শব্দ হারিয়ে ফেলেছেন এবং পালানোর চেষ্টা করছেন। আমি আপনার সব অপ্রয়োজনীয় প্রশ্নের উত্তর দেব, যদি আপনি আগে আমার একটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সাহস দেখান।’ এক ইঞ্চি জমি না ছেড়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন অভিষেকও। তিনি লেখেন, ‘আমি আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে তৈরি। শুধু আপনি জায়গা ও সময় বেছে নিন। অডিয়ো বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে আমরা বসব, আপনার দুটি টেলিফোনে কথোপকথন নিয়ে।’ তখন পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বিরোধী দলনেতা লেখেন, ‘আপনি হাইকোর্টে কেন যাচ্ছেন না? বুমেরাং হওয়ার ভয়ে? আমি চ্যালেঞ্জ করছি, আগে আপনি একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজের স্বচ্ছতা প্রমাণ করুন।’ এখানেই লেখা শেষ।