শব্দবাজি নয়, সবুজবাজি বানান। তাতে টাকা উপার্জন কম হবে, কিন্তু জীবন তো বাঁচবে। ‘পরামর্শ’ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে মেয়ো রোডের জনসভা থেকে যেদিন সেই মন্তব্য করলেন মমতা, তার আগেরদিনই উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরে বেআইনি বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে কমপক্ষে নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। সেই ঘটনা নিয়ে সোমবার সরাসরি মন্তব্য না করলেও তাঁর ইঙ্গিত যে দত্তপুকুরের ছিল, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই রাজনৈতিক মহলের।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণের হাইলাইটস
— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: আমার তো মনে হচ্ছে যে ডিসেম্বরে না লোকসভা নির্বাচন করে দেয়। জানুয়ারিতেও নির্বাচন করিয়ে দিতে পারে।
— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: চন্দ্রযান-৩ মিশনে পশ্চিমবঙ্গের ২৮ জন আছেন। তাঁদের আমি ব্যক্তিগতভাবে চিঠি পাঠিয়েছি। তাঁরা যদি সময় দিতে পারেন, তাহলে রাজপথে তাঁদের নিয়ে মিছিল করব। তাঁদের সম্মানিত করব।
— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে ১০ লাখ চাকরি দেব। ১০ লাখ ছেলেমেয়েকে চাকরি দেওয়া কোনও ব্যাপারই নেই। ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প এবং বিভিন্ন শিল্পে তাঁদের নিয়োগ করা হবে।
— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: শিক্ষকের ক্ষেত্রে ২৪,০০০ শূন্যপদ আছে। কিন্তু কেউ না কেউ কোর্টে গিয়ে মামলা করে দিচ্ছে। আপনারাও কোর্টে যান। বলুন যে কীভাবে নিয়োগ করতে হবে, বলে দিন। সেভাবেই করা হবে। বিচারপতির কমিটির তত্ত্বাবধানে হোক, কোনও সমস্যা নেই আমার। তিন মাসের মধ্যে পুলিশে ৮,০০০ লোক নেওয়া হবে।
— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: দেখি তো কত বড় সাহস! গোলি মারো স্লোগান যাঁরা দিয়েছেন, তাঁদের গ্রেফতার করতে হবে। আমি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি।
— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: পুজো হয়ে যাক। তারপর আপনাদের (কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচন) নির্বাচনের বিষয়ে পদক্ষেপ করব। তবে একটা প্রতিজ্ঞা করতে হবে। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন করতে হবে। তবে আপনারা ঝামেলা করেন না। ওই 'গোলি মারো'-র লোকেরা করেন। কলেজে বহিরাগতরা যেন ঢুকতে না পারে। পুলিশকে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিচ্ছি।
— রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে চূড়ান্ত আক্রমণ মমতার। তাঁর বক্তব্য, এখন মাথায় একজন ছাতার মতো হয়ে গিয়েছেন। ওঁনার চেয়ারকে সম্মান করি। কিন্তু উনি সংবিধান লঙ্ঘন করছেন। মনে রাখবেন যে রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রী এক নন। আপনি মনোনীত, আমরা নির্বাচিত। নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে পাঙ্গা নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। বিজেপি সেলের লোককে যাদবপুরের উপাচার্যের পদে বসিয়ে দিচ্ছেন।
— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: যাঁরা ইংরেজি শিখতে চান, যাঁরা কম্পিউটারের ট্রেনিং করতে চান, তাঁদের জন্য জেলায়-জেলায় কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। চাকরি বাঁধা একেবারে।
— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: যাঁরা অবৈধ কাজ করেন, তাঁদের একটু বেশি লোভ। আমরা সবুজ বাজি নিয়ে বৈঠক করেছি। এটা তো দীর্ঘদিন ধরে আছে। বালিচুরি, ইটভাটা নিয়ে কোনও আইন ছিল না। আমরা সেগুলি করেছি। শব্দবাজি নয়, সবুজবাজি তৈরি করুন। তাতে হয়ত টাকা কম আসবে। কিন্তু জীবনটা তো বাঁচবে।
— একশ্রেণির সাংবাদিককে আক্রমণ করলেন মমতা। তাঁর দাবি, টাকা নিয়ে তাঁরা মমতার বিরুদ্ধে লিখছেন। সেই রেশ ধরেই মমতা জানান, যাঁরা লিখছেন, তাঁদের পকেটে কোথা থেকে টাকা আসছে, সেটা যদি খুলতে শুরু করি, তাঁদের বাড়িতে রেড শুরু করি… তবে করব না, তাঁরা কোথা থেকে টাকা কালেক্ট করেন, তাহলে দেখিয়ে দিতাম যে শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেতারা টাকা কালেক্ট করেন না, সাংবাদিকরা আরও বেশি টাকা কালেক্ট করেন।
— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম তো সম্প্রতি হয়েছে। লোহার তার, লোহার চেন দিয়ে পুরো জায়গাটা খালি করেছিল। আমি হঠাৎ দেখলাম, আমায় তাড়া করল। আমার সঙ্গে ছিলেন দিলীপ মজুমদার। তিনি মারা গিয়েছেন। প্রথমে আমায় একটা ডান্ডা মারল। মাথার ডানদিক থেকে গলগল করে রক্ত পড়ছে। আমি ভাবছি যে পুলিশের ডান্ডা ওরা কোথা থেকে পেল? ততক্ষণে ওরা মাথার বাঁ-দিকে মারল। বাঁ-দিক থেকে গলগল করে রক্ত বেরোতে শুরু করল। তারপর ব্রেনের কাছে মারতে গেল। তখন কীভাবে হাতটা উঠে গেল। হাতে লেগেছিল। ব্রেন বেঁচে গিয়েছিল।
— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: আমায় যদি জিজ্ঞাসা করেন যে আপনার কাছে সবথেকে গর্বের বিষয় কোনটা? আমি ছাত্র রাজনীতির প্রোডাক্ট। দুধের ডিপোতেও কাজ করেছি। আমি যোগমায়া কলেজের ইউনিট প্রেসিডেন্ট ছিলাম। সেটা কলেজের ইউনিটের জন্য খরচ করেছি।
— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমার আগে অভিষেক কথা বলেছে। ও রাজনৈতিকভাবে প্রায় সবটাই বলে দিয়েছে।’ সেইসঙ্গে অশোক দেব, বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়, মদন মিত্রদের নাম নেন মমতা। মদনের নাম দু'বার নেন তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো।
— আজ তৃণমূল কংগ্রেস ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস। ২৬ তম প্রতিষ্ঠা দিবসের জন্য কলকাতার মেয়ো রোডে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। সেই সভায় ভাষণ দিচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাষণের শুরুতেই মমতা বলেন, 'প্রথম রোদে আপনারা দগ্ধ হচ্ছেন। কিন্তু মনটা দগ্ধ হয়নি। মনটা পুলকিত হচ্ছে।'