জিআই তকমা পেয়েছে বাংলার একাধিক সামগ্রী। সম্প্রতি সেই তালিকায় সুন্দরবনের মধু, উত্তরবঙ্গের কালোনুনিয়া চাল জায়গা করে নিয়েছে। আর এবার জিআই ট্যাগ পেল বাংলার মসলিন। দীর্ঘদিন ধরেই মসলিনের জিআই ট্যাগ পাওয়া নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল বাংলা। অবশেষে তা সফল হল। জানা গিয়েছে , এই সপ্তাহের শুরুতে জিআই কর্তৃপক্ষের তরফে রাজ্য সরকারকে এ বিষয়টি জানানো হয়েছে। এর ফলে সারা বিশ্বে বাংলার মসলিনের কদর আরও বাড়বে বলেই মনে করছে রাজ্য সরকার।
আরও পড়ুনঃ টাঙ্গাইল শাড়িকে প্রাথমিক জিআই স্বীকৃতি বাংলাদেশেরও, আগেই তকমা পেয়েছে বাংলা
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালে মসলিনকে জিআই ট্যাগের জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল। অবশেষে প্রায় ৫ বছর পর জিআই স্বত্ব পেল বাংলার মসলিন। যদিও মসলিন শুধুমাত্র বাংলাতেই তৈরি হয় না সারা বিশ্বের বিভিন্ন এলাকায় মসলিন শাড়ি তৈরি হয়ে থাকে। তবে বাংলার মসলিন এতটাই সূক্ষ্ম যে তাঁকে অন্যান্য জায়গার মসলিনের থেকে আলাদা করে তোলে। এর ফলে বিশ্বের দরবারে বাংলার মসলিনের চাহিদা অনেকটাই বেশি। বহু শতাব্দী পুরানো তাঁত শিল্পের এই প্রোডাক্টটি একসময় রাজা মহারাজাদের কাছে খুবই জনপ্রিয় ছিল। বিশেষ করে মুঘলরা এই শাড়ি খুবই পছন্দ করতেন। সেই সময় মুঘলরা বাংলার মসলিনের নামকরণ করেছিলেন ‘মলমল’ শাড়ি। এছাড়াও আরও একাধিক নামকরণ করা হয়েছিল বিখ্যাত এই বস্ত্রের। রাজ্যের মধ্যে মূলত মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, মালদা, হুগলি, বাঁকুড়া, বীরভূম, ঝাড়গ্রাম, হাওড়া ও পূর্ব বর্ধমান জেলা মসলিনের জন্য বিখ্যাত।
ঐতিহ্যবাহী এই বস্ত্রশিল্প ইংরেজ শাসনকালের সময় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ক্রমেই তা হারিয়ে যেতে শুরু করেছিল। তবে ধীরে ধীরে স্বাধীনতার পর আবারও নতুন করে যাত্রা শুরু করে বাংলার মসলিন। সূক্ষ্মতার থেকে বাংলার মসলিন অন্যান্য এলাকার মসলিনের থেকে এতটাই আলাদা যে বলা হয়, এটি আংটির ভিতর দিয়েও নাকি গলে যায়। শুধু তাই নয়, ছোট্ট দেশলাইয়ের খোলেও পুরো শাড়ি রাখা যায়।
অন্যান্য রাজ্যে মসলিন যেখানে ১৫০ কাউন্টের হয় সেখানে বাংলার মসলিন ৩০০ থেকে ৫০০ কাউন্টের হয়ে থাকে। ঐতিহ্যবাহী এই তাঁত সামগ্রী জিআই তকমা পাওয়ার ফলে স্বাভাবিকভাবেই খুশি রাজ্য সরকার। এ বিষয়ে রাজ্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতরের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস জানান, বাংলার মসলিন জিআই তকমা পাওয়ার ফলে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষ বিশেষ করে উৎপাদনকারীরা অনেক বেশি উপকৃত হবেন। এরফলে বিশ্বের দরবারে মসলিনের গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে।