রাজ্যসভায় সদ্য পাস হওয়া কৃষি বিলের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সম্প্রতি বলেন, ‘আমি একজন কৃষক। কখনও মনে করিনি যে সরকার কৃষকদের ক্ষতি করতে চায়।’ এই কথার রেশ টেনে এবং নাম না করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কটাক্ষ করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোমবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং–কে কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কয়েকজন ভুঁইফোড় বলছেন, আমিও চাষি। আপনারা যদি চাষি হন, তা হলে তো চাষিরা হয়ে যাবে বাসি।’ কৃষি বিল পাস হওয়ার চরম নিন্দা জানিয়ে কটাক্ষের সুরে মমতা বলেন, ‘বিজেপি–র মুখে ফুটেছে হাসি, চাষীদের করে দিয়েছে বাসি।’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে তাঁর জিজ্ঞাস্য, ‘হাল চাষ করার ক্ষমতা নেই, কৃষকদের হাল ফেরাবে। কী করেছেন কৃষকদের জন্য? কোনওদিন জীবনে লাঙল দিয়ে চাষ করেছেন?’
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘এই সরকার মজুতদারের সরকার, কালোবাজারির সরকার। কারণ, রাজ্য সরকারের হাত থেকে সব ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। ফোঁড়ে, জোতদারদের জন্ম দিয়েছে কেন্দ্রের সরকার। রাজ্য সরকার এই সব ফোঁড়েদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। কিন্তু সেই ক্ষমতা এই নতুন বিলে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। হিটলারি কায়দায় দেশ চলছে। সংবিধান মানে না, ইতিহাস মানে না। যা ইচ্ছে তাই করছে।’
আমফানের পর কেন্দ্রের অসহযোগিতা এবং নামমাত্র আর্থিক সাহায্যের অভিযোগ তুলে মমতা বলেন, ‘আমফানের সময় ১০০০ কোটি টাকা দিয়ে চলে গেছে। যেখানে কেন্দ্রই সমীক্ষা করে দেখেছে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। জিএসটি–সহ রাজ্যের অন্যান্য প্রাপ্র্য দেওয়া নাম নেই, শুধু বলছে রাজ্যকে ধার করতে। কেন ধার করব?’ এর পরই কেন্দ্রকে কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভাত দেওয়ার ক্ষমতা নেই, কিল মারার গোঁসাই।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘কৃষক বিল পাশ করিয়ে কৃষকদের খেত, মুখের গ্রাস কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত চলছে। কৃষকদের জমি কাউকে পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে কেন্দ্র। আলু, পেঁয়াজ বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। একদিকে করোনা, আর একদিকে বিজেপি–র এই বুলডোজ করা এই বিল— মরোনা। অর্থাৎ তুমি না খেতে পেয়ে মরো। ভোট এলেই হিন্দু–মুসলমান দেখাবে। দেশের অর্থনীতি ধসে গেছে। এই সরকার মিথ্যা কথা, কুৎসা, অপপ্রচারের সরকার।’ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ যদি প্রশ্ন করে, উলঙ্গ রাজা তোমার কাপড় কোথায়? কী জবাব দেবে বিজেপি!’ তিনি এদিন কেন্দ্রের সরকারকে মনে করিয়ে দেন, ‘মানুষ যদি খেতে না পায়, আগামীদিনে কিন্তু ছেড়ে কথা বলবে না। এটা বিজেপি–র মনে রাখা দরকার।’