করোনায় আক্রান্ত অবস্থায় কারও মৃত্যু হলেই যে সে সংক্রমণে মারা গিয়েছে এমনটা মানতে নারাজ রাজ্য সরকার। কোনও রোগীর মৃত্যুর কারণ করোনা সংক্রমণ কি না তা খতিয়ে দেখতে এবার কমিটি গঠন করল স্বাস্থ্য দফতর। করোনা সংক্রমিত অবস্থায় মৃত ব্যক্তির চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্ত নথি পাঠাতে হবে সেই কমিটির কাছে। তার পর কমিটির সদস্যরা ঠিক করবেন সেই ব্যক্তির মৃত্যুর প্রত্যক্ষ কারণ COVID 19 সংক্রমণই কি না। বিরেধীদের দাবি, রাজ্যে করোনায় মৃতের সংখ্যা কম করে দেখাতেই এই পন্থা নিয়েছে রাজ্য।
বৃহস্পতিবার নবান্নে এ সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, করোনায় আক্রান্ত অবস্থায় কারও মৃত্যু হলেই তার মৃত্যুর কারণ করোনা সংক্রমণ বলে মানবে না রাজ্য সরকার। যদি ওই রোগী আগে থেকে কোনও জটিল রোগে আক্রান্ত থাকেন তবে তার মৃত্যুর কারণ জানতে তদন্ত হবে। সেই তদন্ত করতেই ৫ সদস্যের কমিটি গড়ে ফেলল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।
কমিটির সদস্যরা হলেন রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথি। বর্তমানে রাজ্যের স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদে আসীন তিনি। এছাড়া রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য। মেডিক্যাল কলেজের কার্ডিওথোরাসিক অ্যান্ড ভাসকুলার সায়েন্সের বিভাগীয় প্রধান প্লাবন মুখোপাধ্যায়। এসএসকেএম-এর ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন বিভাগের প্রধান জ্যোতির্ময় পাল।
এবার থেকে COVID 19 অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গে কারও মৃত্যু হলে তার যাবতীয় চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি পাঠাতে হবে এই কমিটির কাছে। তারাই ঠিক করবেন মৃত্যুর প্রকৃত কারণ কী।
বিরোধী বাম – বিজেপির দাবি, রাজ্যে করোনায় মৃতের সংখ্যা কমিয়ে দেখাতে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কারণ, আগে থেকে কারও কোনও জটিল রোগ থাকলেও করোনা সংক্রমণের পর যদি তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় তবে মৃত্যুর কারণ করোনা সংক্রমণই। সেক্ষেত্রে সংক্রমণ রুখতে না পারার দায় সরকারের।
এছাড়া রয়েছে আরও একটি আশঙ্কা। গত শুক্রবার বিকেল ৪.৩০ মিনিটে নবান্নে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন করোনারোধে রাজ্য সরকারের তৈরি বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যরা। সাংবাদিকদের তাঁরা জানান করোনায় আক্রান্ত হয়ে পশ্চিমবঙ্গে মৃতের সংখ্যা ৭। ঠিক তার দেড় ঘণ্টা পর সন্ধে ৬টা নাগাদ সেই নবান্নে দাঁড়িয়ে মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা জানান, করোনায় রাজ্যে মৃতের সংখ্যা ৩। ঠিক ১ দিন আগে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীও করোনায় রাজ্যে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন। যদিও ততক্ষণে রাজ্যে করোনা আক্রান্ত অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৬ জনের। এর পর প্রশ্ন ওঠে, অস্বস্তিকর হলেও নতুন কমিটির কথা মানবে তো রাজ্য সরকার?