প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর সন্তান সুচেতনা ভট্টাচার্য হালে জানিয়েছেন, তিনি মানসিক ভাবে একজন পুরুষ। আর তাই নারী অঙ্গ বয়ে চলা তাঁর পক্ষে কষ্টসাধ্য। ঠিক সেই কারণেই এবার শারীরিক ভাবেও পুরুষ হওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছেন তিনি।
এই কথা বলার পরেই বহু নামজাদা বাঙালি তাঁর সিদ্ধান্তকে মানবিক সমর্থন জানিয়েছেন। কিন্তু পারিবারিক সূত্রেই সুচেতনার একটি রাজনৈতিক পরিচয়ও আছে। যদিও তিনি নিজে কখনও সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নেননি। কিন্তু পারিবারিক ভাবে যাঁদের সঙ্গে তাঁদের রাজনৈতিক বিরোধিতা রয়েছে, কী বলছেন সেই সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা?
হালে সুচেতনার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন কুণাল ঘোষ। তিনি লিখেছেন, ‘সুচেতনা ভট্টাচার্যর সিদ্ধান্ত তাঁর নিজের। এ নিয়ে কোনও টিপ্পনি, কটাক্ষের কারণ নেই, অধিকারও নেই। ব্যক্তিগত বিষয়ে অনধিকার চর্চা সুরুচির পরিচায়ক নয়। সুচেতনা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটা তিনি নিতেই পারেন বলে মনে করি। সাহসী মনোভাবের জন্য সুচেতনাকে অভিনন্দন।’ কুণালবাবুর এই টুইটের নীচে কেউ কেউ কটাক্ষ করলেও, অনেকেই এর প্রশংসা করেছেন। অনেকেরই মত, রাজনৈতিক মতপার্থক্যকে সরিয়ে রেখে যেভাবে তিনি সুচেতনার সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন, তা প্রশংসনীয়।
কিন্তু কুণালবাবুর এই মন্তব্যের চেয়েও বেশি করে প্রশংসিত হয়েছে বিজেপির নেতা তরুণজ্যোতি তিওয়ারির পোস্টটি। তরুণজ্যোতিবাবুও সোশ্যাল মিডিয়ায় সুচেতনার প্রতি মানবিক সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘সুচেতনা ভট্টাচার্য যদি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কন্যা না হতেন, তাহলে তাঁকে নিয়ে এত লেখালেখি হতো না। অবশ্য তাঁকে নিয়ে এত লেখালেখিৃর দরকারটা কী বলুন তো? আমিও লিখতাম না, কিন্তু আপনাদের লেখা পড়ে লিখতে বাধ্য হলাম।’ এর পরে তিনি লেখেন, ‘সুচেতনা ভট্টাচার্যর জীবনযাপনের খরচা আপনারা বহন করেন? তাঁর সুবিধা অসুবিধায় পাশে দাঁড়ান? আপনার দয়া ভিক্ষায় তাঁর জীবন চলে? এগুলোর প্রত্যেকটার উত্তর যদি ‘না’ হয় তাহলে দয়া করে আপনাদের মতামত আপনাদের পকেটে রাখুন।’
(আরও পড়ুন: 'ওঁকে দেখে কেউ যদি সাহস পায় মন্দ কী?', সুচেতনার ছক ভাঙা ইচ্ছাকে কুর্নিশ সুজয় প্রসাদ-রত্নাবলীর)
এর পরে তিনি মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গে টেনে এনে বলেছে, ‘মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়কে চেনেন? দেশের প্রথম রূপান্তরকামী অধ্যক্ষ হয়ে নজির গড়েছিলেন৷ তিনি তাঁর যোগ্যতায় ওই জায়গায় পৌঁছেছিলেন।। রূপান্তরকামী হওয়ার জন্য বিশেষ সুবিধা পাননি। আজকে যদি সুচেতনা সুচেতন হতে চান, তাহলে আপনাদের অসুবিধা কোথায়?’
তিনি লেখেন, ‘তিনি মনে প্রাণে একজন পুরুষ। একজন পুরুষের ক্ষেত্রে তাঁর নারীদেহ বয়ে বেড়ানো অত্যন্ত কষ্টকর। এই একই জিনিস অনেক নারীদের মধ্যেও দেখা যায়। তাঁরা মনে প্রানে নিজেদের যে লিঙ্গের বিশ্বাস করেন, সেই লিঙ্গে যদি নিজেদেরকে নিয়ে যান, তাহলে আপনাদের কষ্ট কোথায় হচ্ছে?’
(আরও পড়ুন: বুদ্ধদেব কন্যার সেক্স চেঞ্জের সিদ্ধান্তকে ‘লাল সেলাম’ উষসীর, 'অনুপ্রেরণা জোগাবে', মত সুজয়প্রসাদের)
সুচেতনার প্রশংসা করে এর পরে তিনি লেখেন, ‘এই সাহসটা ক’জন দেখাতে পারেন বলুন তো? সুচেতনা বা সুচেতনের সঙ্গে আমার রাজনৈতিক বিভেদ থাকতে পারে, কিন্তু তাঁর এই সিদ্ধান্তকে আমি সম্মান করি। অনেকে যেটা পারেন না, সেটা তিনি পারছেন। যে কোনও ব্যক্তির পরিচয় তাঁর কাজের মাধ্যমে। তাঁর লিঙ্গের মাধ্যমে নয়।’
শেষে তিনি লেখেন, ‘জীবনে অনেক বড় বড় সংগ্রাম আছে এবং সেগুলো নিয়ে ভাবুন। কারও ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ বা সিদ্ধান্ত নিয়ে কথা বলার অধিকার আপনার নেই। সুচেতনা দেবীর এই সিদ্ধান্তে যদি আপনার কোন ক্ষতি হয় তাহলে আপনি বলতে পারেন। কিন্তু আপনার ক্ষতি হচ্ছে কি?’
(আরও পড়ুন: লিঙ্গ পরিবর্তনের পথে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কন্যা, সুচেতনা জানালেন সুচেতন হচ্ছেন)
তরুণজ্যোতিবাবুর এই পোস্টও ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে। অনেকেই তাঁর প্রশংসা করেছেন ব্যাপক হারে।