ডঃ প্রিয়দর্শী মজুমদার
আইনস্টাইনের ধাঁধা,শুনেছেন কি কখনও?খুবই জনপ্রিয়।আন্তর্জালে হাত দিলেই এই ধাঁধার উপর অসংখ্য লিঙ্ক আপনি খুঁজে পাবেন।একটু সংক্ষেপে বহু চর্চিত ধাঁধাটা বলেনি তবে।এই সমস্যাটি আইনস্টাইনের পাঁচ বাড়ির সমস্যা নামেও পরিচিত|
পাঁচ রঙের পাঁচটি বাড়ি। প্রত্যেকটি বাড়িতে ভিন্ন ভিন্ন দেশের লোক থাকে। শুধু তাই নয়, এই মানুষগুলি একদমই ভিন্ন স্বভাবের।এঁরা প্রত্যেকেই আলাদা পানীয় পান করেন,সিগারেটের ব্র্যান্ডও আলাদা,এমনকী তাঁদের পোষা প্রাণীটাও আলাদা।মানে এককথায় যাকে বলে একদমই ছন্নছাড়া।এঁদের সম্পর্কে কিছু জটিল তথ্য দেওয়া আছে। তার উপর ভিত্তি করে এঁরা কে কোন বাড়িতে থাকে,প্রত্যেকের পছন্দের পানীয়,পছন্দের সিগারেটের ব্র্যান্ড, পোষ্য এগুলোকে ঠিক ঠিক ভাবে জেনে ফেলতে হবে। অবশ্যই জটিল সূত্রগুলির মধ্যে সামগ্রিকভাবে সব কিছুই বলা আছে|এবার সূত্রগুলি একটু দেখে নেওয়া যাক -
লাল ঘরে বাস করে ব্রিটিশ।
সুইডিশের পোষা প্রাণীটা হল কুকুর।
ডেনিশের প্রিয় পানীয় চা।
সাদা বাড়িটার বাঁ-দিকে সবুজ বাড়ি।
সবুজ বাড়ির মালিক কফি পান করেন।
পলমল সিগারেট যিনি খান, তাঁর পোষা প্রাণী হল পাখি।
হলুদ বাড়ির মালিক ডানহিল সিগারেট খান।
মধ্যের বাড়ির বাসিন্দা দুধ পান করেন।
প্রথম বাড়িটায় বাস করেন নরওয়ের এক লোক।
যে বিড়াল পোষেন, তাঁর পাশের বাড়ির বাসিন্দা ব্লেন্ড সিগারেট খান।
ডানহিল যিনি খান,তাঁর পাশের বাড়ির লোকটা ঘোড়া পোষেন।
ব্লুমাস্টার সিগারেট যিনি খান, তিনি বিয়ারও পান করেন।
জার্মান লোকটা খান প্রিন্স সিগারেট।
নীল ঘরটার পাশে থাকেন নরওয়ের লোক।
ব্লেন্ড যিনি খান, তাঁর প্রতিবেশী জল পান করেন।
প্রশ্ন হল,মাছ পোষেন কে?এই রে আপনি হয়তো এখনই এই প্রবন্ধটা পড়াই বন্ধ করে দেবেন।হয়ত এইটুকু পড়েই আপনার মাথা ঘুরছে।দয়া করে একটু ধৈর্য ধরুন।আমি মোটেই এই সমস্যাটা সমাধান করতে বসিনি।কারও কারও মতে, আইনস্টাইন নিজেই বলে গিয়েছেন যে মাত্র দু;শতাংশ মানুষ এই সমস্যাটির সমাধান করতে পারবেন,কারণ এটি অত্যন্ত জটিল। এই সমস্যার ধাপে ধাপে সমাধান সমৃদ্ধ বহু লিঙ্ক আপনি একটু খুঁজলেই পেয়ে যাবেন,তাই নতুন কোনও সমাধান নিয়ে আমি আপনাদের সামনে আসিনি মোটেই।আপনাদের অনুরোধ করব, আপনি সূত্রগুলি একটু ভালো করে দেখুন আর একটা কাগজ কলম নিয়ে বসুন।দেখুন -
পাঁচজন মানুষব্রিটেন, নরওয়ে,ডেনমার্ক,সুইডেন ও জার্মানির বাসিন্দা।
তাঁদের পোষা প্রাণীগুলি হল ঘোড়া,পাখি,কুকুর,বেড়ালও মাছ (এটি সম্পর্কে কোনও সূত্র নেই। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই বোঝা যাচ্ছে পঞ্চম পোষ্যটি মাছ)|
তাঁদের বাড়ির রং লাল,সবুজ,নীল,সাদা ও হলুদ।
পছন্দের পানীয় দুধ,কফি,জল,চা ও বিয়ার।
আর সবশেষে পছন্দের সিগারেট ব্র্যান্ডের তালিকাটি হল - পলমল,ব্লেন্ড,ডানহিল,প্রিন্স আর ব্লুমাস্টার।
আশা করা যায়, এটা বুঝতে আপনাকে খুব বেশি কষ্ট করতে হয়নি।এই তথ্যের দিকে চোখ বোলালেই দেখবেন এটি একটি চৌকো তথ্য অর্থাৎ মানুষও যেমন পাঁচজন,ঠিক তেমনই তাদের পছন্দের জিনিসগুলিও পাঁচটি করেই।আর কোন দু'জন মানুষেরই কোনওরকম পছন্দই মেলে না।কোনও দু'জনের পছন্দের পানীয় মিলে গিয়েছে বা বাড়ির রং মিলে গিয়েছে - এমনটা কিন্তু হচ্ছে না।এখানেই হল এই ধাঁধাটির মজা।আরও একটি লক্ষণীয় ঘটনা হল, 'পাঁচ Xপাঁচ'-এর এই চৌকো ধাঁধাটি সমাধান করতে আইনস্টাইন ১৫ টি সূত্র দিয়েছিলেন।
এতটা জটিলতায় না গিয়ে যদি আরও অনেক ছোটো আকারে এরকম একটি ধাঁধার কথা আমরা যদি ভাবি, তাহলে কেমন দাঁড়াবে, তা দেখে নেওয়া যাক।
দুই বালক রাম ও শ্যাম।তারা জামা,প্যান্ট কিনবে।তাদের সামগ্রিক পছন্দের রং লাল,নীল,হলুদ আর সবুজ।ধরুন আমরা তাদের পছন্দ জানি।তাহলে একটা ছক বানিয়ে সেটি লিখে ফেলি।
জামা প্যান্ট রাম হলুদ নীল শ্যাম সবুজ লাল
আচ্ছা যদি আপনি তাঁদের পছন্দগুলি না জানতেন, তবে ঠিক কীরকম সূত্র দিলে আপনি সঠিক উত্তরটি পেতেন, তা একটু দেখে নেওয়া যাক। আমি একটা বিকল্প দিলাম, এরকম আরও অনেক বিকল্পই হতে পারে।
রামের লাল রং পছন্দ নয়।
শ্যামের জামার রং সবুজ।
প্যান্ট দুটোর রং লাল আর নীল ছিল।
লক্ষ্য করে দেখুন, এই তথ্যগুলির ভিত্তিতে কিন্তু আপনি নিজেই উপরের ছকটা সম্পূর্ণ করতে পারতেন। রামের যেহেতু লাল রং পছন্দ নয়, তাই সেই রং নিশ্চয়ই শ্যাম ব্যবহার করছে। যেহেতু শ্যামের জামার রং সবুজ, তাই অবশ্যই তার প্যান্ট লাল। আবার রামের প্যান্ট লাল হতে পারে না। তাই রামের প্যান্ট নীল আর শ্যামের প্যান্ট লাল। তাহলে বাকিটা রং রইল, হলুদ, তাই রামের জামা হবে হলুদ। আপনি অবশ্যই বিকল্প সূত্র ভাবতেই পারেন কিন্তু কিছুতেই তিনের কম সূত্র দিয়ে আপনি সম্পূর্ণ সমাধান পাবেন না। নিজেই এরকম দুই X দুই, তিন X তিন, চার X চার চৌকো ধাঁধা ও তাদের সমাধান সূত্র তৈরি করতে থাকুন এবং নজর রাখুন চৌকো ধাঁধার মাপ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই আপনাকে কতগুলি করে সমাধান সূত্র বাড়াতে হচ্ছে। এইভাবেই হয়ে উঠুন যুক্তি-বিশারদ ও ধীরে ধীরে এগিয়ে চলুন। আইনস্টাইনের ধাঁধার দিকে। তারপর নিজের যুক্তিজাল দিয়ে সেই ধাঁধা সমাধান করে পৌঁছে জান পৃথিবীর দুই শতাংশ যুক্তিবিদের মধ্যে।
--------------------------------------------------------------------------
লেখক ব্যারাকপুর রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজের ইলেকট্রনিক বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান এবং পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক্স বিষয়ের স্নাতকস্তরের বোর্ড অব স্টাডিজের সদস্য।