নিজেদের ভুলে ম্যাচ হারল, নাকি যথাযথ তথ্য না থাকার মাশুল দিতে হল আফগানিস্তানকে, জোরালো প্রশ্ন উঠতে পারে তা নিয়ে। মঙ্গলবার লাহোরে নিশ্চিত জয়ের দোরগোড়া থেকে ফিরতে হয় আফগানিস্তানকে। সেই সঙ্গে তাদের সুপার ফোরের দরজা থেকেও ফিরে আসতে হয়।
আফগানিস্তান কোচের দাবি যদি যথার্থ হয়, তবে এটা বলতে অসুবিধা নেই যে, আফগানিস্তান জানতই না কত ওভারে কত রান তুললে সুপার ফোরে পৌঁছনো যাবে। তাদের কাছে অর্ধেক ও অস্পষ্ট তথ্য ছিল।
মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে শুধু জিতলেই হতো না, বরং সুপার ফোরে পৌঁছনোর জন্য বড় ব্যবধানে ম্যাচ জিততে হতো আফগানিস্তান দলকে। কেননা জয়ের ২ পয়েন্ট ছাড়াও তাদের নেট রান-রেট বাড়িয়ে বি-গ্রুপের প্রথম দুইয়ে ঢুকতে হতো।
গদ্দাফি স্টেডিয়ামে টস জিতে শুরুতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় শ্রীলঙ্কা। তাতে সুবিধা হয় আফগানিস্তানের। কেননা নেট রান-রেট বাড়িয়ে নিতে হলে রান তাড়া করাই সুবিধাজনক। টস হারা সত্ত্বেও সেই সুযোগ পেয়ে যায় আফগানিস্তান।
শ্রীলঙ্কা নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটের বিনিময়ে ২৯১ রান তোলে। নেট রান-রেটের নিরিখে গ্রুপের প্রথম দুইয়ে ঢুকতে হলে আফগানিস্তানকে ৩৭.১ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ২৯২ রান তুলতে হতো। নাহলে জিতেও কোনও লাভ হতো না আফগানদের।
ব্যাট করার সময় আফগান ক্রিকেটারদের মাথায় ছিল একটিই মাত্র তথ্য। জিততে হবে ৩৭.১ ওভারে। ঝড়ের গতিতে রান সংগ্রহ করে তারা ৩৭ ওভারে ৮ উইকেটের বিনিময়ে ২৮৯ রান তুলে ফেলে। সুতরাং, ১ বলে ৩ রান করলেই ম্যাচ জয়ের পাশাপাশি সুপার ফোরের টিকিটও পেয়ে যেত আফগানিস্তান। তবে ৩৭.১ ওভারে ধনঞ্জয়া ডি'সিলভার বলে আউট হয়ে বসেন মুজিব উর রহমান। ক্রিজের অপর প্রান্তে ছিলেন রশিদ খান, যিনি ততক্ষণে ৪টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে ১৬ বলে ২৭ রান সংগ্রহ করে ফেলেছেন।
আফগানিস্তান ভাবে যে, এর পরে আর ম্যাচ জিতেও কোনও লাভ হবে না তাদের। তাই রীতিমতো হতাশ দেখায় রশিদদের। নতুন ব্যাটসম্যান ফজলহক ফারুকি ক্রিজে এসে ডিফেন্স করে নিজের উইকেট বাঁচানোর চেষ্টা করেন। তাঁর ও রশিদের ধারণা ছিল সুপার ফোরে যাওয়ার আর সুযোগ নেই। তাই সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সিঙ্গল নিয়ে স্ট্রাইকার প্রান্তে পৌঁছননি রশিদ।
কিন্তু চমকটা হল যে, তার পরেও সুপার ফোরে যাওয়ার সুযোগ ছিল আফগানিস্তানের, যেটা তারা জানতই না। শ্রীলঙ্কার ২৯১ রানের জবাবে আফগানিস্তানকে ২৯২ রান তুলতে হতো ৩৭.১ ওভারে। তবে তার থেকে বেশি ওভারে জয় তুলেও সুপার ফোরে যেতে পারতেন রশিদরা। সেক্ষেত্রে ২৯২ রানের বদলে আরও একটু বেশি রান করে জিততে হতো তাদের।
কীভাবে বেশি রান সংগ্রহ করে ম্যাচ জয়ের সুযোগ ছিল রশিদদের সামনে?
২৮৯ রানে দাঁড়িয়ে থাকা আফগানিস্তান যদি সেখান থেকে ১টি ছক্কা হাঁকাত, তাহলে তাদের স্কোর দাঁড়াত ২৯৫ রান। সেক্ষেত্রে ২৯২-এর বদলে বাড়তি ৩ রানের জন্য নেট রান-রেট বাড়তে পারত আফগানদের। ৩৭.৪ ওভারে আফগানিস্তান ২৯৫ রান তুললে ম্যাচ জয়ের পাশাপাশি সুপার ফোরেও পৌঁছে যেত তারা।
অর্থাৎ, ফজলহক যদি ক্রিজে এসে ৩ বলের মধ্যে ১টি ছক্কা মারতেন, তাহলেও লক্ষ্যে পৌঁছে যেত আফগানিস্তান। কিন্তু সেই টার্গেটটাই জানা ছিল না রশিদদের। তাই তাঁরা ৩৭.১ ওভারের পরে আর চেষ্টাও করেননি বড় শট খেলার। আফগানিস্তান কার্যত হাল ছেড়ে দেয়।
এমনকি আফগানিস্তান যদি সেখান থেকে দু'টি সিঙ্গল বা একটি ২ রান নিয়ে ম্যাচ টাই করত এবং তার পরে ১টি ছক্কা হাঁকাত, তাহলে তারা ২৯৭ রানে পৌঁছে ম্যাচ জিতত। সেক্ষেত্রে ৩৮.১ ওভারের ম্যাচে ২৯৭ রানে পৌঁছলেও সুপার ফোরে যেতেন রশিদরা। শেষমেশ ৩৭.৪ ওভারে ফজলহক আউট হয়ে বসেন এবং ২ রান ম্যাচ হারে আফগানিস্তান।
এশিয়া কাপ সংক্রান্ত যাবতীয় খবর, তথ্য-পরিসংখ্যান ও লাইভ স্কোর আপডেটে চোখ রাখতে ক্লিক করুন এখানে
আফগানিস্তান কী জানত:-
আফগানিস্তান জানত ২৯১ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে তাদের জয় তুলে নিতে হবে ৩৭.১ ওভারে। নাহলে জিতেও লাভ নেই।
আফগানিস্তান কী জানত না:-
২৯১ রানের জবাবে ২৯২ রান তুলেই যে ম্যাচ জিততে হবে, এমন কোনও কথা নেই। আফগানিস্তান একবারও ভাবেনি যে, তারা ২৯১ রানের জবাবে ২৯৭ রান পর্যন্ত তুলে ম্যাচ জিততে পরেত। তাহলে তাদের নেট রান-রেট বাড়ত।
কত ওভারে কত রান তুললে আফগানিস্তান সুুপার ফোরে যেত:-
১. আফগানিস্তান ৩৭.১ ওভারে ২৯২ বা তারও বেশি রান তুলে ম্যাচ জিতলে সুপার ফোরে যেত।
২. আফগানিস্তান ৩৭.৪ ওভারে ২৯৫ রান তুলে ম্যাচ জিতলে তারা সুপার ফোরে যেত।
৩. আফগানিস্তান ৩৭.৫ ওভারে ২৯৫ রান তুললে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তাদের নেট রান-রেট সমান হতো। সেক্ষেত্রে টসের মাধ্যমে নির্ধারিত হতো কারা সুপার ফোরে যাবে।
৪. আফগানিস্তান ৩৮.১ ওভারে ২৯৭ রান তুলে ম্যাচ জিতলে তারা সুপার ফোরে জায়গা করে নিত।
আফগানিস্তানের কোচ জোনাথন ট্রট সাংবাদিক সম্মেলনে জানান যে, এমন সব সম্ভাবনার কথা তাঁদের জানা ছিল না। তাঁদের শুধু বলা হয় যে, ৩৭.১ ওভারে জিততে হবে। অর্থাৎ, ম্যাচ অফিসিয়ালদের প্রতি প্রকারান্তরে আঙুল তোলেন আফগান কোচ।