ইশান কিষান এবং শ্রেয়স আইয়ারকে কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে ছেঁটে ফেলল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। গত বছর বোর্ডের ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ছিলেন শ্রেয়স। ‘সি’ ক্যাটেগরিতে ছিলেন ইশান। বুধবার ভারতীয় বোর্ডের তরফে যে কেন্দ্রীয় চুক্তির (২০২৩ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর) তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে দু'জনকেই রাখা হয়নি। শুধু তাই নয়, একেবারে নির্দিষ্টভাবে বিসিসিআইয়ের তরফে বলা হয়েছে, ‘দয়া করে মাথায় রাখবেন যে এই দফার বার্ষিক চুক্তির জন্য শ্রেয়স আইয়ার এবং ইশান কিষানকে বিবেচনা করা হয়নি।’ আর সেই ঘটনা দেখে সংশ্লিষ্ট মহলে কানাঘুষো শুরু হয়েছে, ভারতীয় অধিনায়ক, ভারতের হেড কোচ, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড থেকে নিজেদের বড় ভাবার মাসুল পেলেন শ্রেয়স এবং ইশানরা?
সরাসরি সেটা বলা না হলেও ভারতীয় বোর্ডের তরফে যে বিবৃতি জারি করা হয়েছে, তাতে সেটাই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের মত। কারণ বোর্ডের বিবৃতিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘বিসিসিআই সব অ্যাথলিটদের জন্য এটাই সুপারিশ করেছে যে তাঁরা যখন জাতীয় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন না, তখন যেন ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার উপর জোর দেন।’
আর ঠিক যে কাজটা করেননি শ্রেয়স এবং ইশান। গত বছর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলার পর থেকে আর কোনও প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলেননি ইশান (সদ্য একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে খেলেছেন)। সেই পরিস্থিতিতে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের তরফে তাঁকে বারবার ঝাড়খণ্ডের হয়ে রঞ্জি ট্রফির ম্যাচ খেলতে বলা হয়েছে। ফিট থাকা সত্ত্বেও সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে গিয়েছেন। এমনকী ঝাড়খণ্ড ক্রিকেট সংস্থাকেও কিছু জানাননি।
অন্যদিকে, শ্রেয়সও কম যাননি। 'চোট' পেয়ে ইংল্যান্ড সিরিজ থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন তারকা ব্যাটার। পরে রঞ্জি ট্রফির কোয়ার্টার-ফাইনালের আগে মুম্বইকে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে তাঁর পিঠে চোট আছে। তাই খেলতে পারবেন না। কিন্তু জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির স্পোর্টস সায়েন্স ও মেডিসিনের প্রধান নীতীন প্যাটেল সেই তত্ত্ব উড়িয়ে দেন। তিনি জানিয়ে দেন যে শ্রেয়সের নতুন করে কোনও চোট নেই। আর তিনি খেলার জন্য ফিট আছেন।
সেই পরিস্থিতিতে কড়া অবস্থান নেয় ভারতীয় বোর্ড। তখন থেকেই জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছিল যে এবার কি ইশান ও শ্রেয়সদের মতো খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে? আর সেই জল্পনায় কার্যত সিলমোহর দিয়ে দেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ইশান বা শ্রেয়সের নাম না করলেও তাঁর ইঙ্গিতটা সেদিকেই ছিল বলে মত সংশ্লিষ্ট মহলের।
রাঁচিতে চতুর্থ টেস্ট জয়ের পরে রোহিত সাফ বলে দেন, ‘টেস্টে সাফল্য পাওয়ার জন্য খিদে থাকতে হবে। যে ছেলেদের সেই খিদেটা আছে, তাদেরকেই আমরা সুযোগ দেব। যাদের খিদে নেই, (তাদের সুযোগ দেওয়া হবে না)। কাদের সেই খিদে নেই, (টেস্ট দলে) থাকার ইচ্ছা নেই, সেটা বোঝা যায়। যাদের খিদে আছে, যারা কঠিন পরিস্থিতিতে খেলতে চায়, সেই ছেলেদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।’
আর সেই মন্তব্যের পরেই ইশান এবং শ্রেয়সকে কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে ছেঁটে ফেলেছে বিসিসিআই। তাঁদের এখনই কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ফেরানো হবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়। তাঁদের জন্য একটাই সুখবর যে বিসিসিআই একটি নয়া নিয়ম চালু করেছে। যে নিয়ম অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনও ক্রিকেটার যদি তিনটি টেস্ট বা আটটি একদিনের ম্যাচ বা ১০টি টি-টোয়েন্টি খেলেন, তাঁদের কেন্দ্রীয় চুক্তির ‘সি’ পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হবে। কিন্তু সেই সুযোগ কি পাবেন ইশান ও শ্রেয়সরা? উত্তরটা জানে বিসিসিআই।