চোখের সামনে মাওবাদীদের গুলিতে খুন হতে দেখেছেন বাবা, ঠাকুরদাকে। মাওবাদীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন ভাইও। তা সত্ত্বেও প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে ডাক্তারি পড়াশোনা শেষ করেছেন। আর মাওবাদীদের গুলির লড়াই সেখানে নিত্য ঘটনা। এবার মাওবাদীদের বুলেটের জবাব দিতে ব্যালটকেই বেছে নিলেন ছত্তিশগড়ের তরুণ চিকিৎসক প্রকাশ কুমার গোটা। ছত্তিশগড়ের বস্তারের ১০ নম্বর আসন থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন এই তরুণ চিকিৎসক। তারপরে খবরে উঠে এসেছেন এই নির্দল প্রার্থী।
আরও পড়ুন: বিজাপুরের জঙ্গলে তুমুল গুলির লড়াইয়ে নিকেশ ৬ মাওবাদী, নির্বাচনে নাশকতার ছক বানচাল
প্রকাশ জানান, তাঁর ঠাকুরদা মাওবাদীদের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। তাঁর বাবাকেও ছাড়েনি মাওবাদীরা। এমনকী তাঁর ভাইকেও অপহরণ করেছিল মাওবাদীরা। তাঁকে তারা হত্যার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, তাঁকে বেধড়ক মারধর করার পর ছেড়ে দেয়। বর্তমানে তিনি কোমায় আছেন। এর জন্য পুলিশ প্রশাসনের কাছে তিনি তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু, কোনও লাভ হয়নি। তবে মাওবাদীদের বুলেট বাবা এবং ঠাকুরদাকে ঝাঁঝরা করে দিলেও তিনি মনে করেন মাওবাদী সমস্যার সমাধান একমাত্র আলোচনার মাধ্যমে সম্ভব। তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র আলোচনা মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করে যেতে পারে। বন্দুকযুদ্ধের মাধ্যমে কখনই এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়।’
এই তরুণ চিকিৎসকের কথায়, ‘আমার নাম প্রকাশ কুমার গোটা। আমি বস্তা ১০ নম্বর আসনের একজন নির্দল প্রার্থী। আমি বিজাপুরের বাসিন্দা। আমি ডাক্তারি পড়া শেষ করেছি। এবার আমি নির্বাচনের ময়দানে প্রবেশ করেছি। সরকারের কাছ থেকে কোনও ধরনের সহযোগিতা পায়নি। আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। এখানে প্রতিনিয়ত গুলির লড়াই চলে। বেঁচে থাকার জন্য আমাদের সংগ্রাম করতে হয়। তাই আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এবার আমি নির্বাচনে লড়ছি।’
প্রসঙ্গত, মাওবাদী অধ্যুষিত এই এলাকায় পড়াশোনা করতে পারেননি এই নির্দল প্রার্থী। তাই ডাক্তারি পড়ার জন্য তিনি বাইরে গিয়েছিলেন। অনেক কষ্ট করে দিনমজুরের কাজ করে তিনি অর্থ সংগ্রহ করে ডাক্তারি পড়াশোনা শেষ করেন। এর জন্য তাঁর ডাক্তারি পাশ করতে করতে বয়স হয়েছে ৩০। সেক্ষেত্রে অনেকটা অতিরিক্ত সময় লেগেছে। কেন নির্বাচনে লড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন প্রকাশ? সেবিষয়ে তিনি বলেন, ‘একদিকে মাওবাদীরা যেমন পুলিশ মনে করে গুলি করে হত্যা করে দেয় আবার অন্যদিকে পুলিশ আমাদের মাওবাদী মনে করে গুলি করে হত্যা করে দেয়। এভাবেই জীবনের জন্য আমাদের সংগ্রাম করতে হয়। তাই বেঁচে থাকার জন্য নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছি।’