দুটি পাতা একটি কুঁড়ির মধ্যে জমা হয়ে থাতে অনেক সংগ্রামের কাহিনী। ন্যায্য হারে মজুরি না পাওয়া, বেশি খাটিয়ে নেওয়া, বোনাস না পাওয়া, শ্রমিক লাইনের নানা অব্যবস্থার মতো একরাশ অভিযোগ। বছরের পর বছর ধরে এই অব্যবস্থার সঙ্গেই মানিয়ে নিতে বাধ্য হন চা শ্রমিকরা। এর মধ্যে থেকেই কিছু মানুষ উঠে আসেন যাঁরা ন্যায্য পাওনাগণ্ডার দাবিতে আন্দোলনে নামেন। শহুরে নেতার মতো চাকচিক্য না থাকলেও তাঁদের রক্তে মিশে থাকে সংগ্রাম। সেই সংগ্রামেরই অন্যতম শরিক মালবাজারের বুলুচিক বরাইক। মা, বাবা দুজনেই ছিলেন চা শ্রমিক। বুলুচিক বরাইক নিজেও কখনও চা শ্রমিক, কখনও চা বাগানের পাহারাদার হিসাবে কাজ করেছিলেন। বিগত দিনে চা বাগান এলাকায় শ্রমিক আন্দোলন মানেই ছিল লাল পতাকা। সেই পতাকা কাঁধেই একদিন রাঙামাটি চা বাগানে দেখা যেত বুলুচিক বরাইককে। গেট মিটিং থেকে বাগানের ছোট সভা সবেতেই ধীরে ধীরে নজর কেড়েছিলেন এই হার না মানা মানুষটা।
বাম শ্রমিক সংগঠন সিটুর হাত ধরে পথ চলা শুরু। এরপর তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি।বাম জমানায় ১৯৯৮, ২০০৩, ২০০৮ সালে মাল পঞ্চায়েত সমিতিতে জয়ী হয়েছিলেন তিনি। ২০১১ সালে সিপিএমের টিকিটেই বিধায়ক হয়েছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়ে তৃণমূলে যোগ দিয়ে ২০১৬ সালে তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হয়ে বিধায়ক হয়েছিলেন তিনি। এবারাও নানা বিতর্ককে পাশ কাটিয়ে টিকিট পেয়ে জিতেও গিয়েছেন বুলুচিক। শুধু জেতা নয়, মন্ত্রীও হয়েছেন তিনি। বাসিন্দাদের মতে, বাম জমানায় পরিমল মিত্র বন ও পর্যটন বিভাগের মন্ত্রী ছিলেন এই মালবাজার থেকেই। এবার সেই মালবাজার থেকে প্রায় সাড়ে তিন দশক পর মন্ত্রী হলেন বুলুচিক বরাইক। অভাবের তারনায় অন্যান্য চা শ্রমিক পরিবারের মতোই স্কুলের পড়াশোনাও বেশি দূর হয়নি। দিন কয়েক আগেও সাদামাটা জীবন যাপন করতেন তিনি। মন্ত্রী হয়েও তেমনি মানুষের পাশে থাকুন বুলুচিক বরাইক, এমনটাই চাইছেন ডুয়ার্সের মানুষ।