বর্ধমান জেলাটার একটা আলাদা পরিচিতি আছে। এই জেলাকে বলা হয় বাংলার শস্যভাণ্ডার। কারণ এখানে শস্য উৎপাদন হয় সবচেয়ে বেশি। তা সে শস্য সবার কাছে পৌঁছে যাক আর নাই যাক। এবার এই জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বিজেপি এক মহিলাকে প্রার্থী করেছে। সেটা বিশেষ চমকের নয়। চমকটা রয়েছে প্রার্থীর জীবনযাত্রায়। যা গ্রামীণ মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। শুধু তাই নয়, এখানের সমীকরণ না জানলে এমন প্রার্থী দেওয়া বিজেপির পক্ষে সম্ভব নয়। তবে হ্যাঁ, এই চমকটা না থাকলে আসনটা নিয়ে শাসকদলকে চাপে ফেলা যেত না।
এখন প্রশ্ন উঠছে, কেমন জীবনযাত্রা ওই প্রার্থীর? কে সেই প্রার্থী? আউশগ্রামের নির্জন–নিরিবিলি রাস্তা দিয়ে একটু ভেতরে ঢুকলে পড়বে মাছ পুকুর পাড়। আর সেখানেই চোখে পড়বে খড়ের চাল, মাটির দেওয়াল ঘেরা তিন কুঠুরির ঘর। তার মধ্যেও মিলবে এক চিলতে বারান্দা। আর তা ঘেরা মাটির দেওয়ালে। দারিদ্র্যের ছাপ এখানে স্পস্ট। আর এই বাড়ির বাসিন্দাকেই এবারের বিধানসভা নির্বাচনের প্রার্থী করা হয়েছে। এটাই চমক। কারণ এখানে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক–সহ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম প্রবেশ করতে পারেনি। এখানে প্রবেশ করেছে লড়াই–সংগ্রাম করে জীবনকে ফিরে দেখার চাহিদা। ব্যস, এতটুকুই।
তপশিলি জাতির প্রার্থীর জন্য সংরক্ষিত এই আউশগ্রাম বিধানসভা। আর তার প্রার্থী কলিতা মাঝি। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে তিনিই বিজেপির প্রার্থী। মাটির এই ধুলোমাখা বাড়িতেই তিনি থাকেন স্বামী, স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে। এমনকী এই বাড়িতেই থাকেন দুই দেওর, শ্বশুর ও শ্বাশুড়ি। সংসার চালাতে কলিতাকে বাড়ি বাড়ি পরিচারিকার কাজ করতে হয়। সেই বাড়িগুলির কাছেও চমক। যিনি কাজ করেন এখন তিনিই প্রার্থী। অর্থাৎ প্রচারের প্রয়োজন নেই ওই বাড়িগুলিতে। বরং বাড়িগুলি চাপে পড়ে গিয়েছে, প্রার্থীই যদি বিধায়ক হয় তাহলে বাড়ি এসে কাজ করবে তো?
উল্লেখ্য, বামপন্থীদের গড় ছিল এই আউশগ্রাম বিধানসভা। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের থেকে তা ছিনিয়ে নিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের অভেদানন্দ থান্ডার। তবে তা মানুষের রায়েই। এবারও তৃণমুল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন তিনি। সুতরাং লড়াইটা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে করতে হবে কলিতাকে। দরিদ্র পরিবারে মহিলা কলিতা মাঝিকে প্রার্থী করে বিজেপি সম্ভাবনা দেখছে। আউশগ্রাম বিধানসভার গুসকরা শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কলিতা মাঝি। স্বামী সুব্রত মাঝি কল মিস্ত্রির কাজ করেন। আর ১৪ বছরের ছেলে পার্থ অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। স্বামীর উপার্জনে সংসারের অনটন মেটে না। তাই চারটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন কলিতা দেবী।
বিজেপি প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করার সময়ও তিনি একটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করছিলেন। প্রার্থী হওয়ার পর তিনি কিছুদিন কাজ থেকে ছুটি নিয়েছেন। তারপর দলীয় কার্যালয়ে গেলে দলের কর্মী–নেতারা তাঁকে বরণ করে নেন। কলিতা দেবী, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির নীতি–আদর্শে আকৃষ্ট হয়ে যোগদান করেন। তাঁর বাপের বাড়িও এই গ্রামেই। মঙ্গলকোটের কাশেমনগরে বাপের বাড়ি কলিতা দেবীর। বাবা দিনমজুর ছিলেন। সেখানেও দারিদ্র্য থাকায় পড়াশোনা বেশি দূর হয়নি। কলিতা দেবী বলেন, ‘বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হয়ে সবার সমান অধিকারের জন্য কাজ করব। আমি নিজে দারিদ্র্যের মধ্যে দিয়ে লড়াই করেছি। তাই সবার কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করব।’ এখন তাড়াতাড়ি বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করতে চান আউশগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী কলিতা মাঝি। প্রধানমন্ত্রী এসে তাঁর জন্য প্রচার করুন, সেই আবদারও করেছেন তিনি।