আইএসএফ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ‘বিজেপি যোগ’ নিয়ে এবার চওড়া ফাটল দেখা দিল ত্রিকোণ জোটে। দ্বন্দ্ব বেধে গেল আইএসএফ—বামের মধ্যে। দু’টি আসন নিয়ে সংযুক্ত মোর্চার অভ্যন্তরে তৈরি হয়েছে জটিলতা। আবার এই দু’টি ক্ষেত্রেই আইএসএফ প্রার্থীকে ঘিরে স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে টানাপড়েন শুরু হয়েছে সিপিএমের।
চাপড়া ও কৃষ্ণগঞ্জ এই দু’টি কেন্দ্রের আইএসএফ প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিজেপি যোগের অভিযোগ তুলেছে সিপিএম। ওদিকে কৃষ্ণগঞ্জের প্রার্থীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না—জানিয়ে ওই কেন্দ্রে নিজেদের প্রার্থীর মনোনয়ন জমা করিয়েছে বামেরা। অথচ মনোনয়ন জমা করার দিনেই সেখানকার আইএসএফ প্রার্থী অনুপ মণ্ডলও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, সিপিএম তাঁকে নানা ভাবে বিভ্রান্ত করে প্রতারণা করেছে। প্রথম থেকেই চাপড়ার আইএসএফ প্রার্থীকে নিয়ে ‘বিজেপি যোগের’ অভিযোগ তুলে আপত্তি জানিয়ে এসেছে সিপিএম। আবার কৃষ্ণগঞ্জে আইএসএফ প্রার্থীকে নিয়েও তাদের একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় মঙ্গলবার। ওইদিন কৃষ্ণগঞ্জ কেন্দ্রের আইএসএফ প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না—জানিয়ে, ডিওয়াইএফ নেত্রী ঝুনু বৈদ্যকে দিয়ে দলের প্রতীক চিহ্নে মনোনয়ন জমা করায় সিপিএম। ওই দিনই আবার মনোনয়নপত্র জমা দেন আইএসএফ প্রার্থী অনুপ। তাঁর বিস্ফোরক অভিযোগ, প্রথম থেকেই তিনি সিপিএম নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করে এসেছেন তিনি। কিন্তু সিপিএম তাঁকে বিভ্রান্ত করেছে। তাঁকে তারা নানা ভাবে ঘুরিয়েছে বলে অভিযোগ অনুপের। তাঁর আরও অভিযোগ, সিপিএম মানুষকে বলেছে যে, তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না। অনুপের বক্তব্য, ‘সিপিএম আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমি প্রথম থেকেই ওদের নেতাদের কাছে গিয়েছি। যোগাযোগ করেছি।’
অন্য দিকে, চাপড়ার সিপিএম নেতাদের পাল্টা দাবি, অনুপ কোনও দিনই তাঁদের কারোর সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তা ছাড়া অনুপের সঙ্গে বিজেপির যোগ আছে। তাঁর বাড়ি বগুলা এলাকায়। সেখানে তিনি বিজেপির সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ২০১৮ সালে তাঁর স্ত্রী বিজেপির টিকিটে পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁকে মানতে না—পারার এটাই সবচেয়ে বড় কারণ। অনুপ বর্তমানে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের অন্যতম শরিক ‘নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অব ইন্ডিয়া’—র সঙ্গে যুক্ত। এই দল থেকেই তাঁকে টিকিট দেওয়া হয়েছে বলে অনুপের দাবি।
এপ্রসঙ্গে বুধবার সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলেন, ‘ওই ব্যক্তির সঙ্গে বিজেপির সক্রিয় যোগাযোগ আছে। আর রাজ্য বামফ্রন্ট থেকেও তো বলা হয়নি যে, কৃষ্ণগঞ্জ আইএসএফ-কে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
তবে সিপিএমের এই অবস্থান মানতে নারাজ—মোর্চার শরিক কংগ্রেসের স্থানীয় নেতারা। দলের কৃষ্ণগঞ্জ ব্লক সভাপতি শংকর সরকার বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে দল যা নির্দেশ দেবে সেটাই মেনে চলব। কিন্তু সিপিএমের জোটধর্ম মেনে চলা উচিত ছিল। ২০১৬ সালে ওরা আমাদের সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটিয়েছিল।’
চাপড়া অবশ্য আইএসএফকে ছেড়ে দিয়েছে সিপিএম। সেখানে কাঞ্চন মৈত্রকে প্রার্থী করেছে আইএসএফ। কাঞ্চন এর আগে চাপড়া ও শান্তিপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে বিজেপির পুরনো যোগাযোগের প্রসঙ্গ তুলে সিপিএম প্রথম থেকেই তাঁর প্রার্থিপদ নিয়ে আপত্তি তোলে। কংগ্রেসের একটা অংশও এর বিরোধিতায় রাস্তায় নামে। প্রার্থী বদল না—হওয়ায়, এই অংশটি পরে কংগ্রেস ত্যাগ করে তৃণমূলে যোগ দেয়। তবে কংগ্রেসের একটা অংশ কাঞ্চনের হয়ে লড়াইয়ে শামিল হতে রাজি হয়েছে।
কিন্তু চাপড়ার আইএসএফ নেতৃত্ব কাঞ্চনের প্রার্থিপদ বাতিল করার জন্য রাজ্য নেতৃত্বের কাছে আবেদন করেছে। এই নিয়ে তাঁরা প্রকাশ্যে বিক্ষোভও দেখিয়েছে। আপাতত তাঁরা রাজ্য নেতৃত্বের চূড়ান্ত নির্দেশের অপেক্ষায় আছেন।
বুধবার কাঞ্চন মনোনয়ন জমা দিলেও তাঁর পাশে দেখা যায়নি চাপড়ার আইএসএফ নেতৃত্বকে। দলের চাপড়া ব্লক কমিটির আহ্বায়ক ফরজ আলি মোল্লা বলেন, ‘প্রচণ্ড গরম পড়ে যাওয়ায়, মনোনয়ন জমার সময়ে থাকতে পারিনি।’
পাশাপাশি তিনি আরও বলেন যে, ‘রাজ্য নেতৃত্ব ১ এপ্রিল তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন বলেছেন। সেজন্য আমরা অপেক্ষা করছি।’
দলীয় সূত্রে খবর, সিপিএমও কাঞ্চনকে সরানোর জন্য মোর্চার ভিতরে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যদি আইএসএফ কাঞ্চনকে না—সরায়, তা হলে প্রয়োজনে তারা ‘বিকল্প রাস্তার’ সন্ধান করতে পারে বলে স্থানীয় নেতাকর্মীদের দাবি।
এপ্রসঙ্গে সিপিএমের তরফে সুমিত দে বলেন, ‘চাপড়া কেন্দ্র নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে। আমরা এখনও বলছি যো, এই কেন্দ্রের জন্য আমরা গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ প্রার্থী চাই।’ চাপড়া আসনটি তাদের দেওয়া হয়েছে ও কাঞ্চন ওই দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি। ফলে আব্বাস সিদ্দিকীরাও তাঁকে সরে যাওয়ার জন্য সে ভাবে জোর করতে পারবেন কি না—সন্দেহ রয়েছে। মনোনয়ন জমা করে কাঞ্চনের দাবি, ‘কে কী বলছেন জানি না। তবে চাপড়ার মানুষ আমার পাশে আছেন।’