‘রক অন’ ছবি ২০০৮ সালে রূপোলি পর্দায় পথ চলা শুরু করেন অভিনেত্রী প্রাচী দেশাই। তার আগে ছোট পর্দায় জনপ্রিয় মুখ ছিলেন তিনি। ‘ওয়ানস আপঅন আ টাইম ইন মুম্বই’ এবং ‘বোল বচ্চন’-এর মতো ছবিতে কাজ করেছেন প্রাচী। কিন্তু ২০১৬ সালের পর থেকে আচমকা বড় পর্দায় আর দেখা মেলেনি অভিনেত্রীর।
তবে পাঁচ বছর পর অভিনেত্রীর থিয়েট্রিকাল প্রোজেক্ট ওটিটিতে মুক্তি নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন নায়িকা। সেই সম্পর্কে বিটির সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বেশ কিছু বিস্ফোরক অভিযোগ করেন প্রাচী।
দীর্ঘ দিন পর্দার থেকে কেন দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন অভিনেত্রী? সেই সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি জানান, ‘আমি ঠিক ভাবনাচিন্তা করে এই দূরত্ব বজায় রেখে চলিনি। শুরু থেকেই আমি একটু গেম চেঞ্জারের ভূমিকা পালন করে এসেছি- আমি উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করার পরই এক টেলিভিশন ধারাবাহিকে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করি, এর পর-পরই আমি ‘রক অন’ ছবি দিয়ে বড় পর্দায় ডেবিউ করি!! এরপর আমি পুরোপুরি টেলিভিশনের পর্দা থেকে বেরিয়ে যাই। আমার কেরিয়ারের শুরুতে সেটা খুব তাড়াতাড়ি ছিল, অনেকের কাছেই এই ধরণের সুযোগ এত তাড়াতাড়ি পাওয়া সহজ হয়ে ওঠেনা।
কিন্তু তখনও আমি নিজের শর্তে কাজ করতাম, এমনকি এখনো তাই করি। আমি জানি প্রচুর লোক নিজেকে পর্দায় দেখতে চায়, তবে আমি নিজের ক্ষেত্রে সেটা করিনি। অনেক কারণের জন্য আমি স্রোতে ছিলামনা। আমি বুঝতেও পারিনি সময় বেরিয়ে যাচ্ছে; খুব তাড়াতাড়ি। পিছন ফিরে তাকানোর পর আমি বুঝতে পারলাম শূন্যস্থানটা অনেকটাই বড়। ছবিতে যৌনতার চরিত্রে আমি কখনো কাজ করতে চাইনি। আর সেই জন্য হয়তো ইন্ডাস্ট্রিতে দীর্ঘ সময় ধরে আমাকে লড়াই চালিয়ে যেতে হয়েছে। সেখানে আমাকে সবাই ‘হট’ হিসেবে দেখতে চাইত’।
অভিনেত্রী প্রশ্ন, কীভাবে একজন নারীকে শুধুমাত্র সেই হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায়? কেন সকলে নারীকে সেই দৃষ্টিতে দেখে। সে কে বা কেমন সেই হিসেবে নয় কেন? ‘বেশ কিছু পুরুষ পরিচালক এবং প্রযোজকের কাছে আমি নিজের সম্পর্কে ফিডব্যাক পেয়েছিলাম, নিজেকে আরো হট করে তোলার ওপর কাজ করতে হবে আমাকে’। তাই আমি কাজ থেকে একটু দূরত্ব বজায় রেখেছিলাম। বেশ কিছু যৌনপ্রাসঙ্গিক বড় ছবি তিনি হাতছাড়া করেছেন বলে জানান।
অভিনেত্রী আরো জানিয়েছেন, ‘বেশ কিছু নামী পরিচালক আমাকে কাজ অফার করেছিলেন, কিন্তু তাঁদের কাছে আমি অসম্মানিত হই। আমার মনে হয়েছিল তাঁদের ছবিতে কাজ দিয়ে তাঁরা আমাকে দয়া করছে। তাঁদের সমস্যা হল, স্ক্রিপ্টের অভাবে তাঁরা কাউকে না বলতে অভ্যস্ত ছিল না। অনেক ক্ষেত্রে আমি পরিচালকদের সঙ্গে দেখা করতে যেতাম, কিন্তু তাঁরা আমাকে বলতে চাইতা না কীভাবে আমাকে তাঁরা মাথায় রেখেছে। তাঁরা স্ক্রিপও জানাতো না, এমনকি গল্পও বলতে চাইত না। এমন মনে হত যেন আমি লুক টেস্টে গেছি, সেখানে নিজের মুখ দেখাতে মানা করছি। এইভাবে আমি ছবি করার জন্য রাজি হতাম না। গত দু’বছর আগে আমি সিদ্ধান্ত নিই এভাবে চলতে পারেন না। সকলে ভাবতে শুরু করে হয়তো আমার কোনো ইচ্ছাশক্তি নেই। এটা ছড়িয়ে পড়তেই, এসব শুনে অনেকে আমার কাছে কাজ নিয়ে আসেনি। সম্প্রতি ওটিটিতে আমি একটা ছবি করছি। আমাকে প্রথমে ফোনে বলা হয়েছিল। এরপর স্ক্রিনপ্লে দেওয়া হয়েছিল। সেটা পড়ে আমার পছন্দ হয়েছে। আমার চরিত্র পছন্দ হয়েছে তাই আমি করেছি’।
প্রাচীর কথায়, তাঁর জীবনে যদি কখনো সাহায্যের প্রয়োজন হয়েছে তখন তিনি তাঁর সহকর্মী একতা কাপুর অথবা ফারহান আখতারের কাছে গেছেন। তাঁরা সবসময় তাঁকে সঠিক পথ দেখিয়েছে। তবে তিনি তাঁদের কাছে কখনো কাজের বিষয় সাহায্য চাননি। অনেক ক্ষেত্রে এমন হয়েছে অনেকের প্রোজেক্ট এবং স্ক্রিপ্ট পছন্দ হয়েছে তাঁর। তিনি ফোন করে কোলাবোরেশনের কথা বলেছেন। কিন্তু তাঁর লাজুক স্বভাবের জন্য কাজ করতে রাজি হননি অনেকে। তাই তিনি অনেককে মেসেজ করাও ছেড়ে দিয়েছেন। যদি তিনি কাজ করতে চান, সরাসরি অডিশন দেওয়া পছন্দ করেন বলে জানিয়েছেন।
ওটিটি সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রাচী জানিয়েছেন, এই প্ল্যাটফর্মটা তাঁর কাছে নয়া পথ চলা শুরু। অভিনেতাকে তাঁর চরিত্র এবং প্ল্যাটফর্মকে ভালবাসা উচিত বলে মনে করেন নায়িকা। তিনি প্ল্যাটফর্মটিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন কারণ, গত দু'বছর নিজের চরিত্রের বিপরীতে কোনো ছবি বা চরিত্রকে মানতে পারেননি, সেই সুযোগ এই প্ল্যাটফর্মে থিয়েট্রিক্যাল ফিল্মের মাধ্যমে পাচ্ছেন। অভিনেত্রীর কাছে, এই সুযোগ তাঁর কেরিয়ারে নয়া শুরু। ‘আমার কাছে এখন একমাত্র গেম প্ল্যান এক্সপেরিমেন্টিং’।